পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R o छैकारछ থাকি। আনন্দ তাহার ডাক্তারি-বিদ্যা লইয়া মাঝে মাঝে আমাকে নাড়াচাড়া দিবার চেষ্টা করিলেই রাজলক্ষ্মী সমোহ অনুযোগে বাধা দিয়া বলে, ওঁকে টানাটানি ক’বে কাজ নেই ভাই, কি হ’তে কি হবে, তখন আমাদেরই ভুগে মরতে হবে। আনন্দ বলে, যে ব্যবস্থা করচেন, ভোগার মাত্ৰা এতে বাড়বে বই কমবে না দিদি ! এ আপনাকে সাবধান কৰ্পে দিচ্ছি। রাজলক্ষ্মী সহজেই স্বীকার হইয়া বলে, সে আমি জানি আনন্দ, ভগবান আমার জন্মকালে এ দুঃখ কপালে লিখে রেখেছেন । ইহার পরে আর তর্ক চলে না । দিন কাটে কখনো বই পড়িয়া, কখনো নিজের বিগত-কাহিনী খাতায় লিখিয়া, কখনাে বা শূন্য মাঠে একা একা ঘুরিয়া বেড়াইয়া। এক বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে কৰ্ম্মের প্রেরণা আমাতে নাই ; লড়াই করিয়া হুটোপুটি করিয়া, সংসারে দশজনের ঘাড়ে চড়িয়া বসার সাধ্যও নাই, সঙ্কল্পও নাই। সহজে যাহা পাই তাহাই যথেষ্ট বলিয়া মানি । বাড়ীঘর টাকাকড়ি বিষয়-আশয় মান-সন্ত্রম এ সকল আমার কাছে ছায়াময়। অপরের দেখাদেখি নিজের জড়ত্বকে যদিবা কখনো কৰ্ত্তব্য বুদ্ধির তাড়নায় সচেতন করিতে যাই, অচিরকাল মধ্যেই দেখি আবার সে চােখ বুজিয়া ঢুলিতেছে—শত ঠেলাঠেলিতেও আর গা নাড়িতে চাহে না। শুধু দেখি একটা বিষয়ে তন্দ্ৰাতুর মন কলরবে তরঙ্গিত হইয়া উঠে, সে ঐ মুরারিপুরের দশটা দিনের স্মৃতির আলোড়নে। ঠিক যেন কানে শুনিতে পাই বৈষ্ণবী কমললতার সস্নেহ অনুরোধ-নতুনগোঁসাই, এইটি করে দাও না ভাই!! ঐ যাঃসব নষ্ট ক’রে দিলে ? আমার ঘাট হয়েছে গো, তোমায় কাজ করতে ব'লে-নাও ওঠে। পদ্মা পোড়ারমুখী গেল কোথায়, একটু জল চড়িয়ে দিক না, চা খাবার যে তোমার সময় হয়েছে গোঁসাই। সেদিন চায়ের পাত্রগুলি সে নিজে ধুইয়া রাখিত পাছে ভাঙে।