পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কান্ত” এ প্রশ্নের উত্তর সে দিল না, চুপ করিয়া রহিল। বহুক্ষণ নিঃশব্দে কাটিলে ডাকিলাম, কমললতার সাড়া আসিল না, চাহিয়া দেখিলাম। সে গাড়ীর এককোণে মাথা রাখিয়া চোখ বুজিয়াছে। সারাদিনের শ্ৰান্তিতে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে ভাবিয়া তুলিতে ইচ্ছা হইল। {া। তারপরে নিজেও যে কখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছি জানি না। হঠাৎ একসময়ে কানে গেল-নতুনগোঁসাই ? চাহিয়া দেখি সে আমার গায়ে হাত দিয়া ডাকিতেছে। কহিল, ওঠে, তোমার সাইথিয়ায় গাড়ী দাড়িয়েছে। তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিলাম, পাশের কামরায় কিষণ ছিল, ডাকিয়া তুলিতে সে আসিয়া ব্যাগ নামাইল, বিছানা বাঁধিতে গিয়া দেখা গেল যে দু-একখানায় তাহার শয্যা রচনা করিয়া দিয়াছিলাম, সে তাহা ইতিপূর্বেই ভঁাজ করিয়া আমার বেঞ্চের একধারে রাখিয়াছে। কহিলাম, এটুকুও তুমি ফিরিয়ে দিলে-নিলে না ? কতবার ওঠানামা করতে হবে, এ বোঝা বইবে কে ? দ্বিতীয় বস্ত্রটিও সঙ্গে আনো নি-সেও কি বোঝা ? দেবো। দু-একটা বা’র করে ? বেশ যা হোক তুমি। তোমার কাপড় ভিখারীর পায়ে মানাrব কেন ? বলিলাম, কাপড় মানাবে না, কিন্তু ভিখারীকেও খেতে হয়। পৌঁছতে আরও দুদিন লাগবে, গাড়ীতে খাবে কি ? যে খাবারগুলো আমার সঙ্গে আছে তাও কি ফেলে দিয়ে যাবো।--তুমি ছোবে না ? কমললতা এবার হাসিয়া বলিল, ইস, রাগ দুষ্ঠাখে ? ওগো, ৰ্ছেবি গো ছোব ; থাক ও সব, তুমি চলে গেলে আমি পেট ভরে গিলবো । সময় শেষ হইতেছে, আমার নামিবার মুখে কহিল, একটু দাড়াও ত গোঁসাই, কেউ নেই, আজ লুকিয়ে তোমায় একটা প্ৰণাম করে নিই। বলিয়া হেঁট হইয়া আজ সে আমার পায়ের ধূলা লইল ।