পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|Yo স্মৃতিরক্ষাকল্পে তদবলম্বনে আখ্যায়িক, গীতি, গাথা, কিম্বা পাঁচালী রচনা করিবার পদ্ধতি ছিল । তৎসমস্তের মধ্যে যে সকল অলৌকিক এবং কাল্পনিক কথা জড়িত আছে তাহা বাদ দিয়া ঐতিহাসিক সত্য গ্রহণ করিতে হয় । তামাদের দেশের পৌরাণিক ইতিবৃত্ত আলোচনা করিলে সর্বদাই দেখা যাইবে, অনেক তাঙ্কুত উপাখ্যানের সহিত প্রকৃত ঘটনা জড়িত রহিয়াছে । চাদ কবি এবং চারণ বা ভট্টগণের রচিত গাথা হইতে রাজপুতনার ইতিহাস উদ্ধার হইয়াছে, একথা কাহারও অবিদিত নহে । কেবল আমাদের দেশের নহে—হাস্যন্ত দেশের প্রচীন ইতিহাসের অবস্থাও তদ্রুপ। রোমের প্রাচীন ইতিবৃত্তে অদ্ভুত আখ্যায়িকার অভাব নাই, ইউরোপের ইতিহাসে অনেক অলৌকিক কাহিনী পাওয়া যায় । কিন্তু এই কারণে তৎসমস্ত উপেক্ষিত হয় নাই ; তাহা হইতে তানেক ঐতিহাসিক সত্য নিষ্কাসিত হইতেছে । সুতরাং উদ্ধৃত উপাখ্যানটা কিয়ৎপরিমাণে কল্পনা বিজড়িত বলিয়া মনে করিলেও অমূলক বলিয়া উপেক্ষা করিবার কারণ নাই। বিশেষতঃ ইহার সহিত ইতিহাসের স্পষ্ট সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হইতেছে । এই তাখ্যায়িক আলোচনায় পাওয়া যায় ;— (১) ত্রিপুর রাজপুত্র ত্রিবেণীতে ছিলেন, এবং তিনি হুগলীর মহানদের রাজ-কন্যাকে বিবাহ করেন । (২) রাজ-জামাতার গমনাগমনের নিমিত্ত রাজা যে রাস্ত বাধাইয়াছিলেন, তাহার নাম “জামাই জঙ্গল” ; সেই রাস্তা অদ্যপি বিদ্যমান আছে। (৩) ত্রিপুর রাজকুমার শ্বশুরালয় হইতে অশ্বারোহণে পলায়ন করিয়াছিলেন । প্রথম কথার সহিত ত্রিপুরার ইতিবৃত্ত মিলাইলে দেখা যাইবে, দ্রুতু্য পিতা কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া সুন্দরবনে যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তাহার নাম ছিল “ত্রিবেগ ।” গ্রু ত্রিবেগ এবং ত্রিবেণী একার্থ বোধক এবং অভিন্ন বলিতে বোধ হয় কাহারও আপত্তি হইবে না। বিশেষতঃ সুন্দরবনের সন্নিহিত হুগলী জেলায় অদ্যপি

  • “তথোবাচ প্রসন্ন্যস্ত কপিলস্তং নৃপত্মিজম্।

মদৃবরেণ চ ভোগেন ক্ষয়মেনে গমিষ্যতি ॥ তঃ শাপতে মুক্তিলপ্রস্তন্তে তব বংশজাঃ । এতদবচো নিশম্যাসে হৃষ্টচিত্তস্ততেীহভবৎ ॥ স্থাপয়ামাস তত্রৈব ত্রিবেগ নগরীং শুভাম্। প্রভাববানভূক্তত্র রাজ শব্দ তিরোহিতঃ। স দোর্দণ্ড প্রতাপেন বহুদেশান বশেনয়ন । পালয়ামাস ধৰ্ম্মেণ প্রজা আত্ম প্রজাইব ॥ যদ যদধিকৃতং রাজ্যং ত্ৰিবেগপতিন নৃপ । তত্ত্বৎ সৰ্ব্বং তদারভ্য ত্রিবেগ খ্যাতিমাগতম্।” রাজরত্নাকর—৬ষ্ঠ সর্গ, ১৯-২৩ শ্লোক ।