পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$e রাজমালা । [ দ্বিতীয় যাইবে । তাহ আলোচনা করিলে স্পষ্টই প্রতীয়মান হইবে, ত্রিপুর ভূপতিবৃন্দ কেবল সামরিক-বীর ছিলেন না—দান-বীরও ছিলেন । রাজমালার প্রতি লহরেই তাম্র-পটের বিস্তর নিদর্শন পাওয়া যায়। এই অবস্থা কেবল ত্রিপুরায় নহে—সর্বত্রই গরিলক্ষিত হইবে । সমগ্র ভারতে এখনও বহু সংখ্যক তাম্র-শাসন অনাবিষ্কৃত রহিয়াছে, কত কালে তাহার সম্যক উদ্ধার হইবে, সে বিষয় মনুষ্য-ধারণার অগোচর । তাম্র-শাসনের ক্রমিক বিবরণ আলোচনা করিলে জানা যাইবে, সমাজে এমন name or একটা সময় আসিয়াছিল, যে কালে ধৰ্ম্মের মর্য্যাদা রক্ষার সঙ্গে ম্যাদা রক্ষ। শৌর্য্যের গৌরবও পূর্ণমাত্রায় রক্ষিত হইত। সে কালে দাতাগণ ধৰ্ম্মভাব প্রণোদিত হইয়া দানপত্র সম্পাদন কালেও বীৰ্য্যের গরিমা বিস্মৃত হইতে পারেন নাই। দানপত্রে দাতার এবং তাহার পূর্বপুরুষগণের কীৰ্ত্তিকলাপ ঘোষণা উপলক্ষে যে সকল গৰ্বিবত বাক্য উৎকীর্ণ হইয়াছে, তাহ শূরত্বের পূজা ভিন্ন আর কিছু নহে। কিন্তু তাম্র-শাসনের প্রথম যুগে দাতাগণের হৃদয়ে এবম্বিধ ভাব পোষণের দৃষ্টান্ত নাই ; পূর্বোন্ধত রামচন্দ্রের দানপত্রেও এরূপ আভাস পাওয়া যায় না। বৌদ্ধমতাবলম্বী অনেক রাজাও এরূপ গর্বের্বর হাত হইতে নিস্কৃতি লাভ করিয়াছেন । দৃষ্টান্ত স্থলে শ্ৰীচন্দ্র দেবের শাসনের উল্লেখ করা যাইতে পারে। পরবর্তীকালে এই ভাবের ক্রমশঃ বাড়াবাড়ি তারস্ত হইয়াছিল। তদরুণ ধৰ্ম্মভাব কত মান হইতেছিল, দুই একটা দৃষ্টান্ত দ্বারা তাহা দেখাইবার চেষ্টা করা হইবে। রাজা দেবখড়েগর আসরফপুর লিপির কথা পূর্বে বলা হইয়াছে। সেই রাজা দেবখড়োর শাসনে উৎকীর্ণ বাক্যাবলীর মধ্যে পাওয়া গিয়াছে ;— তাম্র-শসম । “জয়ন্ত্যশেষ ক্ষিতিপাল মূলিমাল মণিদ্যোতিত পাদপীঠ * * প্রণতোত্তমাগং শ্ৰীদেবখতৃেগ নৃপত্তিজ্জিতারিঃ ।” অর্থাৎ—রাজা দেবখড়গ, র্যাহার পাদপীঠ অশেষ ক্ষিতিপালগণের মৌলিস্থিত মণিরাজিম্বারা সমুদ্ভাসিত # * যিনি অরিকুল জয় করিয়াছেন, তাহার জয় । কেশবসেন দেবের ইদিলপুর তাম্র-শাসনের চতুর্থ শ্লোকে যে সকল বাক্য কেশবসেনের উৎকীর্ণ হইয়াছে, তাহাও পূর্বের্বত্ত ভাবাপন্ন। শ্লোকটী এই – তাম্র শাসন । “অবাতরদথাম্বয়ে মহতি তত্র দেবঃ স্বয়ং, সুধা কিরণ শেখরো বিজয়সেন ইত্যাখ্যয় । যদঙঘ্ৰিনখধোরণি ফুরিতমোলয়ঃ ক্ষাভুজে, দশাস্তনতিবিভ্রমং বিদধিরে কিলৈকৈকশঃ ॥” মৰ্ম্ম —স্বধাকিরণ শেখর স্বয়ং মহাদেবের সদৃশ বিজয়সেন নামক এক নরপতি এই বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। বিজিত নৃপতিগণ যখন নত মস্তকে র্তাহার চরণে প্রণতঃ হইতেন, তখন সেই সকল ভূপতিবৃন্দের মুকুটমণির জ্যোতিঃ চতুর্দিকে বিকীর্ণ হওয়ায় বোধ হইত, যেন দশাস্ত রাবণ র্তাহাকে প্রণাম করিতেছে।