লহর । } | মধ্য-মণি । ২৩৯ সঙ্গে খেলায় ব্যাপৃত থাকিত, তখন বৎসটা মাতৃস্তন্য পরিত্যাগ করিয়া বালিকার অনুসরণ করিত এবং তাহার দিকে অনিমিষ দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিত। সে মুহূর্তের জন্যও বালিকার কাছ ছাড়া হইতে চাহিত না। প্রতিবেশিনীগণের মধ্যে অনেকেই গাভী এবং যুবতীর প্রতিজ্ঞার কথা অবগত ছিল। তাহারা স্মিতমুখে বালিকা ও বৎসের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া, সেই প্রতিজ্ঞার বিষয় আলোচনা করিত এবং বৎসটার ব্যবহার দর্শনে বিস্মিত হইত। । বালিকা ক্রমে কৈশোরে পদার্পণ করিল। সে মাতার প্রতিজ্ঞার কথা অনেক দিন হইতেই শুনিয়া আসিতেছিল এবং গো-বৎসের কার্য্যও লক্ষ্য করিতেছিল। জননীর সেই প্রতিজ্ঞার কথা ক্রমশঃ বৃদ্ধ দলের আলোচনার বিষয় হইয়া উঠিল, যুবকবৃন্দ সেই কথা লইয়া হাসিঠাট্ট আরস্ত করিল। বালিকা এখন সমস্তই বুঝিতেছিল, সে এই ব্যাপারে লজ্জিতা ও মৰ্ম্মপীড়িতাবস্থায় কালযাপন করিতে লাগিল । একদিকে লোকগঞ্জনা, অন্যদিকে গো-বৎসের ঐকাস্তিক ভালবাসা তাহাকে ব্যাকুল করিয়া তুলিল। বালিকা একদিন ব্যথিতচিত্তে মায়ের নিকট অবস্থা জানিতে চাহিলে, মা সাম্ভনাৰাক্যে বলিলেন—“লোকের কথা তুমি কখনও কাণে তুলিওন, ইহা অসস্তব কথা, মামুষের সহিত কি পশুর বিবাহ হইতে পারে ? ” কালক্রমে বালিকা যৌবন-সীমায় উপনীত হইল ; গো-বৎসও পূর্ণাবয়ব বুষে পরিণত হইল। এখন বৃষট মুহূৰ্ত্তের জন্যও তাহার সঙ্গ ছাড়া হইতে চাহে না, এবং এক দৃষ্টিতে তাহার মুখের পানে তাকাইয়া থাকে। আর যুবতী মায়ের প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়া লজ্জায় মরিয়া যায় । ইহার উপর আবার লোকের পরিহাস তাহার পক্ষে অসহনীয় হইয়া উঠিল । যুবতী বুঝিল আত্মহত্য ব্যতীত এই ছবিসহ যাতনার হস্ত হইতে মুক্তিলাভের অস্ত উপায় নাই। একদিন সে গোপনে কোনও নির্জন স্থানে যাইয়া একটা আমলকী বৃক্ষে ঝুলিয়া উদ্বন্ধনে প্রাণত্যাগ করিল। এই ঘটনায় বৃষট উন্মত্তের স্যায় ছুটিয়া যাইয়া, সেই আমলকী বৃক্ষে বারম্বার শিরাঘাত করিয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইল । ইহার ক্ৰিয়ংকাল পরে তদেশীয় রাজা মৃগয়া উপলক্ষে হস্তী পৃষ্ঠারূঢ় হইয় বন গমন করিলেন। তিনি পর্বতাভ্যন্তরে কিয়দূর অগ্রসর হইবার পর দেখিলেন, পথপার্শ্বে একটা পত্রবিহীন আমলকী বৃক্ষে একবৃন্তে দুইটামাত্র আমলকী বুলিতেছে। এমন বৃহৎ এবং সুন্দর আমলকী, রাজ আর কখনও দেখেন নাই ; দুইটা একত্বস্তাবলম্বী হওয়ায় উহার সৌন্দর্য যেন আরও বৃদ্ধি পাইয়াছিল। রাজা আগ্রহের সহিত সহচরবর্গকে বন্সিলেন, “এমন আমলকী কখনও দেখি নাই, ফল জুইটী আমায় পাড়িয়া দাও।” এক ব্যক্তি ব্যস্তভাবে ফল পাড়িতে গেল, দৈবাৎ একটা ফল তাহার হস্তচু্যত হইয়া ভূতলে পতিত হওয়ায়, রাজার বাহন হস্তিনী তৎক্ষণাৎ তাহ শুণ্ডম্বারা তুলিয়া মুখে দিল । অপরটা রাজার হস্তে প্রদান করা হইল । i I o: | 'r 轟 i *, l i l m அ HO . f g
পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪৪৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।