পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিবেদন । পরম করণিক পরমেশ্বরের অপার কৃপায় রাজমালার দ্বিতীয় লহর প্রকাশিত হইল। ইহার সম্পাদন কার্য্যে প্রথম লহরের প্রণালী অবলম্বিত হইয়া থাকিলেও যোগ্যতার অভাববশতঃ নানাবিধ ক্রট পরিলক্ষিত হওয়া অনিবাৰ্য্য। এই অক্ষমতার নিমিত্ত সুধী সমাজে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি । রাজমালার প্রথম লহর ১৪৩১ হইতে ১৪৬২ খ্ৰীষ্টাব্দের মধ্যবর্তীকালে রচিত হইয়াছিল। তৎপর কিঞ্চিন দেড়শত বৎসরের মধ্যে মহারাজ ধন্ত্যমাণিক্য ও বিজয়মাণিক্য প্রভৃতি যশস্বী এবং খ্যাতনাম রাজন্তবর্গ ত্রিপুর-সিংহাসন অলঙ্কৃত করিয়াছেন। তঁহার কেবল রাজনীতি-কুশল, শৌর্য-শালী এবং ধৰ্ম্ম-বীর ছিলেন, এমন নহে—সাহিত্যের পুষ্টিবিধানকল্পেও বিস্তর কার্য্য করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু রাজমালার প্রতি ইহাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইবার কোনও প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে না। ধৰ্ম্মমাণিক্যের পরবর্তী ক্রমান্বয়ে নয় জন ভূপতি এ বিষয়ে উদাসীন ছিলেন বলিয়াই মনে হইতেছে। ইঙ্গদের পরবর্তী মহারাজ অমরমাণিক্য পুনৰ্ব্বার এই কার্য্যে হস্তক্ষেপ করেন । তাহার অনুজ্ঞায়, রাজমালার দ্বিতীয় লহর গ্রথিত্ত হইয়াছে। পূৰ্ব্ব-পুরুষের আরব্ধ কার্য্যের উৎকর্ষ বিধানদ্বারা মঙ্গরাজ অমর সত্য সত্যই অমরত্ব লাভ করিয়াছেন। তিনি ধৰ্ম্মমাণিক্যের প্রষত্নে রচিত অংশের পরবর্তী ঘটনা লিপিবদ্ধ করিবার পথ প্রদর্শক ন হইলে, অন্যান্য লহরগুলি পরপরভাবে রচিত হইবার আশা ছিল বলিয়। মনে হয় না । গ্রন্থভাগে সন্নিৰিষ্ট বিবরণ আলোচনায় জানা যাইবে, ১৫৭৭ হইতে ১৫৯১ খ্ৰীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে দ্বিতীয় লহর রচিত হইয়াছিল, সুতরাং এই অংশ সাৰ্দ্ধ ত্রিশত বৎসরের প্রাচীন বলিয়া সাব্যস্ত হইতেছে। ইহা একাধারে সাহিত্য এবং ইতিহাসরূপে গৃহীত হইবার যোগ্য। প্রথম লহরের সম্পাদন কার্য্যে অধিক পরিমাণে শাস্ত্র গ্রন্থের সাহাষ্য গ্রহণ করিতে হইয়াছে, ইহ নিতান্তই অপরিহার্য্য। কারণ, রাজমালার প্রথমাংশ ত্রিপুর ইতিহাসের তথা ভারতবর্ষের ইতিবৃত্তের পক্ষে পৌরাণিক যুগ, ঐতিহাসিক যুগ যাহাকে বলা হয়, তৎসহ ইহার সম্বন্ধ বড় বেশী নাই । সুতরাং শাস্ত্রীয় প্রমাণের আশ্রয় গ্রহণ একান্ত প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয় লহরের সময় হইতে মুসলমান-সংশ্রবে ভারতবর্ষের বিশেষতঃ বঙ্গদেশের ইতিবৃত্তের সহিত ত্রিপুর-ইতিহাসের নৈকট্য সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছে। রাজমালার সম্পাদন কার্য যত অগ্রসর হইতেছে, ততই পারিপার্থিক ঘটনাবলীর সহিত ইহার সম্বন্ধের ঘনিষ্ঠত অধিক দেখা যাইতেছে। এই কারণে, সম্পাদকের দায়িত্ব উত্তরোত্তর এত গুরুতর হইয়া দাড়াইতেছে যে, অনেক স্থলে মত-বাদের জটিল-জাল ভেদ করিয়া অগ্রসর হওয়া অসম্ভব বলিয়া মনে হয় । এই লহরের সম্পাদন কার্য্যে পাশ্ববর্তী প্রদেশসমূহের ইতিহাসের প্রতি এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন মতের উপর লক্ষ্য রাখিতে যথাসাধ্য চেষ্টার ক্রট হয় নাই ; কিন্তু মূল গ্রন্থের অনুরোধে, কোন কোন ঐতিহ্য বিবরণ আংশিক আলোচনা করিতে হইয়াছে, পরবর্তী লহরসমূহে তৎসমস্ত ক্রমশঃ পূর্ণত্ব লাভ করিবে বলিয়া আশা *नःि I তবে, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার অভাব নিবন্ধন এই গুরুতর কার্য্যে ভ্রম-প্রমাঙ্গ সঙ্ঘটিত হওয়া বিচিত্র নহে। বিশেষতঃ মত বিরোধ-স্থলে ষে মত গ্রহণ করা হইয়াছে, তাহ সৰ্ব্ববাদীসম্মত হইবার সম্ভাবনা অতি বিরল। বোধ হয় ইতিহাস চর্চা-নিরত কোন ব্যক্তিই এরূপ মতবিরোধের