পাতা:শ্রীরাজমালা (প্রথম লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y\8 রাজমালা ' |&w জাপি গর্বের সহিত বলিয়া থাকে-"তন শিল্পশিক্ষার কোনও প্রয়োজন মাই, Q কারণ, যে শিল্প স্ববড়াই রাজা শিক্ষা দেন নাই, সেই শিল্প শিল্প মধ্যেই পরিগণিত নহে।” এই একটা কথায় স্পষ্টতররূপে বুঝা যাইতেছে, স্ববড়াই রাজা সকল প্রকারের শিল্পই রাজ্য মধ্যে প্ৰবৰ্ত্তন করিয়াছিলেন। তাহার শাসনকালে প্রবর্তিত হয় নাই, এমন উল্লেখযোগ্য নুতন কোনও শিক্ষণীয় শিল্পকাৰ্য্য ছিল না। রাজা স্ববড়াই-রাজ্যমধ্যে ঘোষণা করিলেন যে, যে ত্রিপুর-রমণী শিল্পকলার উৎকৃষ্ট আদর্শ দেখাইতে সমর্থ হইবে, তাহাকে তিনি বিবাহ করিবেন। এই উৎসাহ জনক ঘোষণার ফলে নিত্য নুতন শিল্প প্রণালী উস্তাবিত হইতে লাগিল, এবং শিল্প নিপুণ মহিলাগণ রাজমহিষীর মৃদুল্লভ আসন লাভ করিতে লাগিলেন। একদা একটা যুবতী স্বচারু কারু কাৰ্যখচিত একখানা রিয়া’ ( কঁাচলি ) রাজাব সম্মুখে উপস্থিত করিলেন। মাছির পাখায় সূর্যরশ্মি পতিত হইলে যে রঙ উস্তাসিত হয়, রিয়াখানা তাহার অনুকরণে বয়ন করা হইয়াছিল। মহারাজ শিল্প-সৌন্দৰ্য্য দর্শনে বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইলেন। তিনি যুবতীকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“মাছি অধিক কাল একস্থানে স্থির থাকে না, একপ অবস্থায় তুমি কি প্রকারে তাহার অনুকরণ করিলে ?” যুবতী বলিলেন,—“আমাদের বাড়ীর একটা স্থানে সর্বদা মাছি বসিয়৷ থাকে তাহা দেখিয়া অনুকরণ করিবার সুযোগ পাইয়াছি, এবং মহারাজেব প্রাত্যর্থে, তদবলম্বনে এই বস্ত্রবয়ন করিয়াছি।” এই কথা শ্রবণে কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া, সেই স্থানটা দেখিবার নিমিত্ত রাজা, যুবতীর বাড়ীতে গেলেন। দেখিলেন, একটা স্থানে সৰ্ব্বদাই অসংখ্য মাছি বসিয়া থাকে, তাড়াইলেও যায় না, ঘুরিয়া ফিরিয়া আবার আসিয়া বসে। মহারাজ ইহার কারণ স্থির করিতে না পারিয়া সেইস্তানের মৃত্তিক খনন করাইয়া দেখিলেন, একটা মৃত সপ প্রোথিত রহিয়াছে। মহারাজের বড়ই আদরের একটা সৰ্প ছিল, সে সৰ্ব্বদা তাহার সঙ্গে সঙ্গে থাকিত। অনুসন্ধানে জানা গেল, যুবতীর পিতা সেই সপটকে বধ করিয়া উক্ত স্থানে প্রোথিত করিয়াছে। এই ঘটনা দর্শনে মহারাজ দুঃখিত হইয়া বলিলেন,—“এই সপ স্বগের গন্ধৰ্ব্ব, কোন কারণে শাপগ্রস্থ হইয়া সপর্যপে আমার আশ্রয় লইয়াছিল । সপের সহিত আমার কথা ছিল, আমাকে প্রতিদিন এক একটী নুতন শিল্পকাৰ্য্য শিখাইবে এবং আমার রাজ্যের মধ্যে তাহ প্রকাশ করিব । এই উপায়ে এক বৎসরের মধ্যে ক্রমাম্বয় ৩৬০টা শিল্পাদর্শ আমার প্রজাগণ শিক্ষা করিবে, এবং আমি ৩৬০টা বিবাহ করিবণ তন্মধ্যে মাত্র ২৪০ট আদর্শ উদ্ধার করিতে সমর্থ হইয়াছি এবং আমি শিক্ষানিপুণ ২৪০ট রমণীর পাণিগ্রহণ করিয়াছি । সৰ্প যখন স্বৰ্গগামী হইয়াঙ্কে, তখন আর নূতন শিল্পাদর্শ পাইবার আশা নাই, সুতরাং এখন আমার রাজত্ব করা বৃথা। আমি চলিলাম, তোমরা তোমাদের অদৃষ্ট লইয়া থাক ” এই কথা বলিয়া भशब्रांडण অন্তৰ্দ্ধান হইলেন।