পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
মানসী

বর্ষায় বাঁধিছে নীড় কলরবে ঘিরে
বনস্পতি! না জানি সে কোন্ নদীতীরে
যূথীবনবিহারিণী বনাঙ্গনা ফিরে,
তপ্ত কপোলের তাপে ক্লান্ত কর্ণোৎপল,
মেঘের ছায়ার লাগি হতেছে বিকল।
ভ্রূবিলাস শেখে নাই কারা সেই নারী
জনপদবধূজন গগনে নেহারি
ঘনঘটা ঊর্ধ্বনেত্রে চাহে মেঘ-পানে;
ঘননীল ছায়া পড়ে সুনীল নয়ানে!
কোন্ মেঘশ্যামশৈলে মুগ্ধ সিদ্ধাঙ্গনা
স্নিগ্ধ নবঘন হেরি আছিল উন্মনা
শিলাতলে; সহস। আসিতে মহা ঝড়
চকিত চকিত হয়ে ভয়ে জড়সড়
সম্বরি বসন ফিরে গুহাশ্রয় খুঁজি,
বলে, ‘মা গো, গিরিশৃঙ্গ উড়াইল বুঝি!’
কোথায় অবন্তীপুরী, নির্বিন্ধ্যা তটিনী,
কোথা শিপ্রানদীনীরে হেরে উজ্জয়িনী
স্বমহিমচ্ছায়া! সেথা নিশি দ্বিপ্রহরে
প্রণয়চাঞ্চল্য ভুলি ভবনশিখরে
সুপ্ত পারাবত; শুধু বিরহবিকারে
রমণী বাহির হয় প্রেম-অভিসারে
সূচিভেদ্য অন্ধকারে রাজপথ-মাঝে
ক্বচিৎ-বিদ্যুতালোকে। কোথা সে বিরাজে
ব্রহ্মাবর্তে কুরুক্ষেত্র! কোথা কনখল,
যেথা সেই জহ্নুকন্যা যৌবনচঞ্চল
গৌরীর ভ্রূকুটিভঙ্গি করি অবহেলা
ফেনপরিহাসচ্ছলে করিতেছে খেলা
লয়ে ধূর্জটির জটা চন্দ্রকরোজ্জ্বল।