পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৮
সোনার তরী

দেখিতে পাও নি যদি দেখিতে পাবে না আর,
মিছে মরি ব’কে।
আমি যা পেয়েছি তাই সাথে নিয়ে ভেসে যাই,
কোনোখানে সীমা নাই ও মধু মুখের।
শুধু স্বপ্ন, শুধু স্মৃতি, তাই নিয়ে থাকি নিতি—
আর আশা নাহি রাখি সুখের দুখের।
আমি যাহা দেখিয়াছি আমি যাহা পাইয়াছি
এ জনম-সই,
জীবনের সব শূন্য আমি যাহে ভরিয়াছি
তোমার তা কই!

লোহিতসমুদ্র। ১১ কার্তিক ১২৯৭


সোনার তরী

গগন গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা—
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।

একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা—
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা।
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।

গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়, কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু ধারে—