পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
সোনার তরী

হবুচন্দ্র রাজা কহে পাকালিয়া চোখ,
‘গবুচন্দ্র, এদের উচিত শিক্ষা হোক।
হেঁটোয় কণ্টক দাও, উপরে কণ্টক,
ডালকুত্তাদের মাঝে করহ বণ্টক।’
সতেরো মিনিট-কাল না হইতে শেষ
ম্লেচ্ছপণ্ডিতের আর না মিলে উদ্দেশ।
সভাস্থ সবাই ভাসে আনন্দাশ্রুনীরে,
ধর্মরাজ্যে পুনর্বার শান্তি এল ফিরে।
পণ্ডিতেরা মুখচক্ষু করিয়া বিকট
পুনর্বার উচ্চারিল— হিং টিং ছট্।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।

অতঃপর গৌড় হতে এল হেন বেলা
যবন পণ্ডিতদের গুরু-মারা চেলা।
নগ্নশির, সজ্জা নাই, লজ্জা নাই ধড়ে—
কাছা কোঁচা শতবার খ’সে খ’সে পড়ে।
অস্তিত্ব আছে না আছে, ক্ষীণখর্ব দেহ,
বাক্য যবে বাহিরায় না থাকে সন্দেহ।
এতটুকু যন্ত্র হতে এত শব্দ হয়
দেখিয়া বিশ্বের লাগে বিষম বিস্ময়।
না জানে অভিবাদন, না পুছে কুশল,
পিতৃনাম শুধাইলে উদ্যতমুষল।
সগর্বে জিজ্ঞাসা করে, ‘কী লয়ে বিচার!
শুনিলে বলিতে পারি কথা দুই-চার,
ব্যাখ্যায় করিতে পারি উলটৃপালট।’
সমস্বরে কহে সবে— হিং টিং ছট্।
স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান