পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১২৫

বনের পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই,
বনের গান গাও দিখি।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘বনের পাখি ভাই,
খাঁচার গান লহো শিখি।’
বনের পাখি বলে, ‘না,
আমি শিখানে। গান নাহি চাই।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,
আমি কেমনে বনগান গাই!’

বনের পাখি বলে, ‘আকাশ ঘন নীল,
কোথাও বাধা নাহি তার।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘খাঁচাটি পরিপাটি
কেমন ঢাকা চারি ধার।’
বনের পাখি বলে, ‘আপনা ছাড়ি দাও
মেঘের মাঝে একেবারে!’
খাঁচার পাখি বলে, ‘নিরালা সুখকোণে
বাঁধিয়া রাখো আপনারে।’
বনের পাখি বলে, ‘না,
সেথা কোথায় উড়িবারে পাই!’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,
মেঘে কোথায় বসিবার ঠাঁই!’

এমনি দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে,
তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে,
নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে,
বুঝাতে নারে আপনায়।