পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
সোনার তরী

দুজনে একা একা ঝাপটি মরে পাখা,
কাতরে কহে, ‘কাছে আয়।’
বনের পাখি বলে, ‘না,
কবে খাঁচায় রুধি দিবে দ্বার।’
খাঁচার পাখি বলে, ‘হায়,
মোর শকতি নাহি উড়িবার।’

শাহাজাদপুর
১৯ আষাঢ় ১২৯৯


যেতে নাহি দিব

দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি, বেলা দ্বিপ্রহর;
শরতের রৌদ্র ক্রমে হতেছে প্রখর।
জনশূন্য পল্লিপথে ধূলি উড়ে যায়
মধ্যাহ্নবাতাসে। স্নিগ্ধ অশথের ছায়
ক্লান্ত বৃদ্ধা ভিখারিনি জীর্ণ বস্ত্র পাতি
ঘুমায়ে পড়েছে। যেন রৌদ্রময়ী রাতি
ঝাঁ ঝাঁ করে চারি দিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম—
শুধু মোর ঘরে নাহি বিশ্রামের ঘুম।

গিয়েছে আশ্বিন। পূজার ছুটির শেষে
ফিরে যেতে হবে আজি বহুদূর দেশে
সেই কর্মস্থানে। ভৃত্যগণ ব্যস্ত হয়ে
বাঁধিছে জিনিস-পত্র দড়াদড়ি লয়ে—
হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি এ ঘরে, ও ঘরে।
ঘরের গৃহিণী, চক্ষু ছলছল করে,
ব্যথিছে বক্ষের কাছে পাষাণের ভার—
তবুও সময় তার নাহি কাঁদিবার
একদণ্ড-তরে। বিদায়ের