পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
সোনার তরী

ধ্বনিতেছে চিরকাল অনাদ্যন্ত রবে,
‘যেতে নাহি দিব। যেতে নাহি দিব।’ সবে
কহে, ‘যেতে নাহি দিব।’ তৃণ ক্ষুদ্র অতি
তারেও বাধিয়া বক্ষে মাতা বসুমতী
কহিছেন প্রাণপণে, ‘যেতে নাহি দিব।’
আয়ুক্ষীণ দ্বীপমুখে শিখা নিব-নিব—
আঁধারের গ্রাস হতে কে টানিছে তারে,
কহিতেছে শতবার ‘যেতে দিব না রে’।
এ অনন্ত চরাচরে স্বর্গমর্ত ছেয়ে
সব-চেয়ে পুরাতন কথা, সব-চেয়ে
গভীর ক্রন্দন ‘যেতে নাহি দিব’। হায়,
তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।
চলিতেছে এমনি অনাদিকাল হতে।
প্রলয়সমুদ্রবাহী সৃজনের স্রোতে
প্রসারিত-ব্যগ্রবাহু জ্বলন্ত-আঁখিতে
‘দিব না দিব না যেতে’ ডাকিতে ডাকিতে
হূহু করে তীব্রবেগে চলে যায় সবে
পূর্ণ করি বিশ্বতট আর্ত কলরবে।
সম্মুখ-ঊর্মিরে ডাকে পশ্চাতের ঢেউ
‘দিব না দিব না যেতে’। নাহি শুনে কেউ,
নাহি কোনো সাড়া।

চারি দিক হতে আজি
অবিশ্রাম কর্ণে মোর উঠিতেছে বাজি
সেই বিশ্বমর্মভেদী করুণ ক্রন্দন
মোর কন্যাকণ্ঠস্বরে। শিশুর মতন
বিশ্বের অবোধ বাণী। চিরকাল ধরে
যাহা পায় তাই সে হারায়; তবু তো রে