পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৪৩

চিরজীবনের মোর ধ্রুবতারা-সম
চিরপরিচয়-ভরা ওই কালো চোখ।
আমার নয়ন হতে লইয়া আলোক,
আমার অন্তর হতে লইয়া বাসনা
আমার গোপন প্রেম করেছে রচনা
এই মুখখানি। তুমিও কি মনে মনে
চিনিবে আমারে? আমাদের দুইজনে
হবে কি মিলন? দুটি বাহু দিয়ে বালা,
কখনো কি এই কণ্ঠে পরাইবে মালা
বসম্ভের ফুলে? কখনো কি বক্ষ ভরি
নিবিড় বন্ধনে তোমারে হৃদয়েশ্বরী,
পারিব বাঁধিতে? পরশে পরশে দোঁহে
করি বিনিময় মরিব মধুর মোহে
দেহের দুয়ারে? জীবনের প্রতিদিন
তোমার আলোক পাবে বিচ্ছেদবিহীন,
জীবনের প্রতি রাত্রি হবে সুমধুর
মাধুর্যে তোমার। বাজিবে তোমার সুর
সর্ব দেহে মনে; জীবনের প্রতি সুখে
পড়িবে তোমার শুভ্র হাসি, প্রতি দুখে
পড়িবে তোমার অশ্রুজল; প্রতি কাজে
রবে তব শুভহস্ত দুটি; গৃহ-মাঝে
জাগায়ে রাখিবে সদা সুমঙ্গলজ্যোতি।
এ কি শুধু বাসনার বিফল মিনতি—
কল্পনার ছল! কার এত দিব্য জ্ঞান,
কে বলিতে পারে মোরে নিশ্চয় প্রমাণ,
পূর্বজন্মে নারীরূপে ছিলে কি না তুমি
আমারি জীবনবনে সৌন্দর্যে কুসুমি
প্রণয়ে বিকশি? মিলনে আছিলে বাঁধা