পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৫৭

বনে দুলেছিল ফুল গন্ধব্যাকুল বাতাসে।
তরুমর্মর নদীকলতান
কানে লেগেছিল স্বপ্ন-সমান,
দূর হতে আসি পশেছিল গান শ্রবণে।
আজি সে রজনী যায়, ফিরাইব তায় কেমনে।

মনে লেগেছিল হেন, আমারে সে যেন ডেকেছে।
যেন চিরযুগ ধরে মোরে মনে করে রেখেছে।
সে আনিবে বহি ভরা অনুরাগ,
যৌবননদী করিবে সজাগ,
আসিবে নিশীথে, বাঁধিবে সোহাগ-বাঁধনে।
আহা, সে রজনী যায়, ফিরাইব তায় কেমনে।

ওগো, ভোলা ভালো তবে, কাঁদিয়া কী হবে মিছে আর?
যদি যেতে হল হায়, প্রাণ কেন চায় পিছে আর?
কুঞ্জদুয়ারে অবোধের মতো
রজনীপ্রভাতে বসে রব কত!
এবারের মতো বসন্ত গত জীবনে।
হায়, যে রজনী যায় ফিরাইব তায় কেমনে।

১৬ আষাঢ় ১৩০০


গানভঙ্গ

গাহিছে কাশীনাথ নবীন যুবা ধ্বনিতে সভাগৃহ ঢাকি,
কণ্ঠে খেলিতেছে সাতটি সুর সাতটি যেন পোষা পাখি।
শাণিত তরবারি গলাটি যেন নাচিয়া ফিরে দশ দিকে,
কখন কোথা যায় না পাই দিশা, বিজুলি-হেন ঝিকিমিকে।
আপনি গড়ি তোলে বিপদজাল, আপনি কাটি দেয় তাহা।
সভার লোকে শুনে অবাক্ মানে, সঘনে বলে ‘বাহা বাহা’।