পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সোনার তরী
১৬৯

তখন দাসীরে ভুলো না গরবে,
এই উপকার মনে রেখো তবে,
মোরেও এমনি পরাইতে হবে
রতনভূষণরাজি।’
কোলের উপরে বসি বাহুপাশে
বাঁধিয়া কবিরে সোহাগে সহাসে
কপোল রাখিয়া কপোলের পাশে
কানে কানে কথা কয়।
দেখিতে দেখিতে কবির অধরে
হাসিরাশি আর কিছুতে না ধরে,
মুগ্ধ হৃদয় গলিয়া আদরে
ফাটিয়া বাহির হয়।
কহে উচ্ছ্বসি, ‘কিছু না মানিব,
এমনি মধুর শ্লোক বাখানিব
রাজভাণ্ডার টানিয়া আনিব
ও রাঙা চরণতলে।’
বলিতে বলিতে বুক উঠে ফুলি,
উষ্ণীষ-পরা মস্তক তুলি
পথে বাহিরায় গৃহদ্বার খুলি,
দ্রুত রাজগৃহে চলে।
কবির রমণী কুতূহলে ভাসে,
তাড়াতাড়ি উঠি বাতায়নপাশে
উঁকি মারি চায়, মনে মনে হাসে—
কালো চোখে আলো নাচে।
কহে মনে মনে বিপুল পুলকে—
রাজপথ দিয়ে চলে এত লোকে,
এমনটি আর পড়িল না চোখে
আমার যেমন আছে।