পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০০
সোনার তরী

তারি মাঝে বসি এ নীরব হাসি হাসিছ কেন?
আমি তো বুঝি না কী লাগি তোমার বিলাস হেন

যখন প্রথম ডেকেছিলে তুমি ‘কে যাবে সাথে’—
চাহিনু বারেক তোমার নয়নে নবীন প্রাতে।
দেখালে সমুখে প্রসারিয়া কর
পশ্চিম-পানে অসীম সাগর,
চঞ্চল আলো আশার মতন কাঁপিছে জলে।
তরীতে উঠিয়া শুধানু তখন—
আছে কী হোথায় নবীন জীবন,
আশার স্বপন ফলে কি হোথায় সোনার ফলে?
মুখ-পানে চেয়ে হাসিলে কেবল কথা না ব’লে।

তার পরে কভু উঠিয়াছে মেঘ, কখনো রবি—
কখনো ক্ষুব্ধ সাগর কখনো শান্তছবি।
বেলা বহে যায়, পালে লাগে বায়,
সোনার তরণী কোথা চলে যায়,
পশ্চিমে হেরি নামিছে তপন অস্তাচলে।
এখন বারেক শুধাই তোমায়—
স্নিগ্ধ মরণ আছে কি হোথায়,
আছে কি শান্তি, আছে কি সুপ্তি তিমিরতলে?
হাসিতেছ তুমি তুলিয়া নয়ন কথা না ব’লে।

আঁধার রজনী আসিবে এখনি মেলিয়া পাখা,
সন্ধ্যা আকাশে স্বর্গ-আলোক পড়িবে ঢাকা।
শুধু ভাসে তব দেহসৌরভ,
শুধু কানে আসে জলকলরব,
গায়ে উড়ে পড়ে বায়ুভরে তব কেশের রাশি।