পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদায়-অভিশাপ
২০৩

মুদ্রিত পদ্মের কাছে। হেথা সুখ গেলে
স্মৃতি একাকিনী বসি দীর্ঘশ্বাস ফেলে
শূন্যগৃহে; হেথায় সুলভ নহে হাসি।
যাও বন্ধু, কী হইবে মিথ্যা কাল নাশি,
উৎকণ্ঠিত দেবগণ।—
যেতেছ চলিয়া?
সকলি সমাপ্ত হল দু কথা বলিয়া?
দশ শত বর্ষ-পরে এই কি বিদায়!
কচ। দেবযানী, কী আমার অপরাধ! 
দেবযানী। হায়, 
সুন্দরী অরণ্যভূমি সহস্র বৎসর
দিয়েছে বল্লভ ছায়া, পল্লবমর্মর—
শুনায়েছে বিহঙ্গকূজন— তারে আজি
এতই সহজে ছেড়ে যাবে? তরুরাজি
ম্লান হয়ে আছে যেন, হেরো আজিকার
বনচ্ছায়া গাঢ়তর শোকে অন্ধকার,
কেঁদে ওঠে বায়ু, শুষ্ক পত্র ঝ’রে পড়ে—
তুমি শুধু চলে যাবে সহাস্য অধরে
নিশান্তের সুখস্বপ্নসম?
কচ। দেবযানী, 
এ বনভূমিরে আমি মাতৃভূমি মানি,
হেথা মোর নবজন্মলাভ। এর ’পরে
নাহি মোর অনাদর— চিরপ্রীতিভরে
চিরদিন করিব স্মরণ।
দেবযানী। এই সেই 
বটতল, যেথা তুমি প্রতি দিবসেই
গোধন চরাতে এসে পড়িতে ঘুমায়ে
মধ্যাহ্নের খর তাপে; ক্লান্ত তব কায়ে