পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিত্রা
২৩৫

শুনি কথা মৃদুকণ্ঠে অবনতমুখে
কহিলা জননী, ‘যৌবনে দারিদ্র্যদুখে
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিলু তোরে;
জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে;
গোত্র তব নাহি জানি তাত।’

পরদিন
তপোবনতরুশিরে প্রসন্ন নবীন
জাগিল প্রভাত। যত তাপসবালক—
শিশিরসুস্নিগ্ধ যেন তরুণ আলোক,
ভক্তি-অশ্রু-ধৌত যেন নব পুণ্যচ্ছটা,
প্রাতঃস্নাত স্নিগ্ধচ্ছবি আর্দ্রসিক্তজটা,
শুচিশোভা সৌম্যমূর্তি সমুজ্জ্বলকায়ে
বসেছে বেষ্টন করি বৃদ্ধবটচ্ছায়ে
গুরু গৌতমেরে। বিহঙ্গকাকলিগান,
মধুপগুঞ্জনগীতি, জলকলতান,
তারি সাথে উঠিতেছে গম্ভীর মধুর
বিচিত্র তরুণকণ্ঠে সম্মিলিত সুর
শান্ত সামগীতি।

হেনকালে সত্যকাম
কাছে আসি ঋষিপদে করিলা প্রণাম;
মেলিয়া উদার আঁখি রহিলা নীরবে।
আচার্য আশিস করি শুধাইলা তবে,
‘কী গোত্র তোমার, সৌম্য, প্রিয়দরশন?’
তুলি শির কহিলা বালক, ‘ভগবন্,
নাহি জানি কী গোত্র আমার। পুছিলাম
জননীরে, কহিলেন তিনি— সত্যকাম,
বহুপরিচর্যা করি পেয়েছি তোরে,