পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চিত্রা
২৪৩

ঘূর্ণচক্র জনতাসংঘ, বন্ধনহীন মহা-আসঙ্গ,
তারি মাঝে আমি করিব ভঙ্গ আপন গোপন স্বপনে।
ক্ষুদ্র শান্তি করিব তুচ্ছ, পড়িব নিম্নে, চড়িব উচ্চ,
ধরিব ধূম্রকেতুর পুচ্ছ— বাহু বাড়াইব তপনে।
নব নব খেলা খেলে অদৃষ্ট, কখনো ইষ্ট কভু অনিষ্ট,
কখনো তিক্ত কখনো মিষ্ট— যখন যা দেয় তুলিয়া—
সুখের দুখের চক্রমধ্যে কখনো উঠিব উধাও পদ্যে
কখনো লুটিব গভীর গদ্যে নাগরদোলায় দুলিয়া।
হাতে তুলি লব বিজয়বাদ্য আমি অশান্ত, আমি অবাধ্য—
যাহা-কিছু আছে অতি অসাধ্য তাহারে ধরিব সবলে।
আমি নির্মম, আমি নৃশংস সবেতে বসাব নিজের অংশ—
পরমুখ হতে করিয়া ভ্রংশ তুলিব আপন কবলে।
মনেতে জানিব সকল পৃথ্বী আমারি চরণ-আসন-ভিত্তি—
রাজার রাজ্য, দস্যুবৃত্তি, কোনো ভেদ নাহি উভয়ে।
ধনসম্পদ করিব নস্য, লুণ্ঠন করি আনিব শস্য—
অশ্বমেধের মুক্ত অশ্ব ছুটাব বিশ্বে অভয়ে।
নব নব ক্ষুধা, নূতন তৃষ্ণা, নিত্যনূতন কর্মনিষ্ঠা—
জীবনগ্রন্থে নূতন পৃষ্ঠা উলটিয়া যাব ত্বরিতে।
জটিল কুটিল চলেছে পন্থ, নাহি তার আদি, নাহিকো অন্ত—
উদ্দামবেগে ধাই তুরন্ত সিন্ধু-শৈল-সরিতে।
শুধু সম্মুখ চলেছি লক্ষি আমি নীড়হারা নিশার পক্ষী—
তুমিও ছুটিছ চপলা লক্ষ্মী আলেয়া-হাশ্যে ধাঁধিয়া।
পূজা দিয়া পদে করি না ভিক্ষা, বসিয়া করি না তব প্রতীক্ষা,
কে কারে জিনিবে হবে পরীক্ষা আনিব তোমারে বাঁধিয়া।
মানবজন্ম নহে তো নিত্য, ধনজনমান খ্যাতি ও বিত্ত
নহে তারা কারো অধীন ভৃত্য— কালনদী ধায় অধীরা।
তবে দাও ঢালি— কেবলমাত্র দু-চারি দিবস, দু-চারি রাত্র,
পূর্ণ করিয়া জীবনপাত্র জনসংঘাতমদিরা।