পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
চিত্রা

পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে।
আমার বসন্তগান তোমার বসন্তদিনে
ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে—
হৃদয়স্পন্দনে তব, ভ্রমরগুঞ্জনে নব,
পল্লবমর্মরে
আজি হতে শতবর্ষ পরে।

 ২ ফাল্গুন ১৩০২


সিন্ধুপারে

পউষ প্রখর শীতে জর্জর, ঝিল্লিমুখর রাতি;
নিদ্রিত পুরী, নির্জন ঘর, নির্বাণদীপ বাতি।
অকাতর দেহে আছিনু মগন সুখনিদ্রার ঘোরে—
তপ্ত শয্যা প্রিয়ার মতন সোহাগে ঘিরেছে মোরে।
হেনকালে হায় বাহির হইতে কে ডাকিল মোর নাম—
নিদ্রা টুটিয়া সহসা চকিতে চমকিয়া বসিলাম।
তীক্ষ্ণ শাণিত তীরের মতন মর্মে বাজিল স্বর—
ঘর্ম বহিল ললাট বাহিয়া, রোমাঞ্চকলেবর।
ফেলি আবরণ, ত্যজিয়া শয়ন, বিরলবসন বেশে,
দুরুদুরু বুকে খুলিয়া দুয়ার বাহিরে দাঁড়ানু এসে।
দূর নদীপারে শূন্য শ্মশানে শৃগাল উঠিল ডাকি,
মাথার উপরে কেঁদে উড়ে গেল কোন্ নিশাচর পাখি!
দেখিনু দুয়ারে রমণীমুরতি অবগুণ্ঠনে ঢাকা—
কৃষ্ণ অশ্বে বসিয়া রয়েছে, চিত্রে যেন সে আঁকা।
আরেক অশ্ব দাঁড়ায়ে রয়েছে, পুচ্ছ ভূতল চুমে,
ধূম্রবরন, যেন দেহ তার গঠিত শ্মশানধূমে৷
নড়িল না কিছু, আমারে কেবল হেরিল আঁখির পাশে—
শিহরি শিহরি সর্ব শরীর কাঁপিয়া উঠিল ত্রাসে।