দ্বার হতে দ্বারে ফিরিল শ্রীমতী লইয়া অর্ঘ্যথালি।
‘হে পুরবাসিনী’ সবে ডাকি কয়,
‘হয়েছে প্রভুর পূজার সময়।’
শুনি ঘরে ঘরে কেহ পায় ভয়, কেহ দেয় তারে গালি।
দিবসের শেষ আলোক মিলালো নগরসৌধ-’পরে।
পথ জনহীন আঁধারে বিলীন,
কলকোলাহল হয়ে এল ক্ষীণ,
আরতিঘণ্টা ধ্বনিল প্রাচীন রাজদেবালয়-ঘরে।
শারদ নিশির স্বচ্ছ তিমিরে তারা অগণ্য জ্বলে।
সিংহদুয়ারে বাজিল বিষাণ,
বন্দীরা ধরে সন্ধ্যার তান,
‘মন্ত্রণাসভ। হল সমাধান’ দ্বারী ফুরারিয়া বলে।
এমন সময়ে হেরিলা চমকি প্রাসাদে প্রহরী যত
রাজার বিজন কানন-মাঝারে
স্তূপপদমূলে গহন আঁধারে
জ্বলিতেছে কেন যেন সারে সারে প্রদীপমালার মতো!
মুক্তকৃপাণে পুররক্ষক তখনি ছুটিয়া আসি
শুধালো, ‘কে তুই ওরে দুর্মতি,
মরিবার তরে করিস আরতি?’
মধুর কণ্ঠে শুনিল, ‘শ্রীমতী, আমি বুদ্ধের দাসী।’
সেদিন শুভ্র পাষাণফলকে পড়িল রক্তলিখা।
সেদিন শারদ স্বচ্ছ নিশীথে
প্রাসাদকাননে নীরবে নিভৃতে
স্তূপপদমূলে নিবিল চকিতে শেষ আরতির শিখা।
পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪০
কথা
আশ্বিন ১৩০৬