পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৪১

অভিসার

বোধিসত্ত্বাবদানকল্পলতা

সন্ন্যাসী উপগুপ্ত
মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে একদা ছিলেন সুপ্ত।
নগরীর দীপ নিবেছে পবনে,
দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে;
নিশীথের তারা শ্রাবণগগনে ঘন মেঘে অবলুপ্ত।

কাহার নূপুরশিঞ্জিত পদ সহসা বাজিল বক্ষে?
সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল,
স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল,
রূঢ় দীপের আলোক লাগিল ক্ষমাসুন্দর চক্ষে।

নগরীর নটী চলে অভিসারে যৌবনমদে মত্তা।
অঙ্গে আঁচল সুনীলবরন,
রুনুঝুনু রবে বাজে আভরণ,
সন্ন্যাসী-গায়ে পড়িতে চরণ থামিল বাসবদত্তা।

প্রদীপ ধরিয়া হেরিল তাঁহার নবীন গৌরকান্তি—
সৌম্য সহাস তরুণ বয়ান,
করুণাকিরণে বিকচ নয়ান,
শুভ্র ললাটে ইন্দু-সমান ভাতিছে স্নিগ্ধ শান্তি।

কহিল রমণী ললিত কণ্ঠে, নয়নে জড়িত লজ্জা,
‘ক্ষমা করো মোরে, কুমার কিশোর,
দয়া কর যদি গৃহে চলো মোর—
এ ধরণীতল কঠিন কঠোর, এ নহে তোমার শয্যা।’