পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪৪
কথা

নিরাশ্বাসে। তাহারে ধরিল চোর বলি;
হস্তে পদে বাঁধি তার লোহার শিকলি
লইয়া চলিল বন্দীশালে।

সেইক্ষণে
সুন্দরীপ্রধানা শ্যামা বসি বাতায়নে
প্রহর যাপিতেছিল আলস্যে কৌতুকে
পথের প্রবাহ হেরি— নয়নসম্মুখে
স্বপ্নসম লোকযাত্রা। সহসা শিহরি
কাঁপিয়া কহিল শ্যামা, ‘আহা মরি মরি,
মহেন্দ্রনিন্দিতকান্তি উন্নতদর্শন
কারে বন্দী করে আনে চোরের মতন
কঠিন শৃঙ্খলে? শীঘ্র যা লো সহচরী,
বল্ গে নগরপালে মোর নাম করি,
শ্যাম। ডাকিতেছে তারে; বন্দী সাথে লয়ে
একবার আসে যেন এ ক্ষুদ্র আলয়ে
দয়া করি।’ শ্যামার নামের মন্ত্রগুণে
উতলা নগররক্ষী আমন্ত্রণ শুনে
রোমাঞ্চিত; সত্বর পশিল গৃহ-মাঝে—
পিছে বন্দী বজ্রসেন নতশির লাজে,
আরক্তকপোল। কহে রক্ষী হাস্যভরে,
‘অতিশয় অসময়ে অভাজন-’পরে
অযাচিত অনুগ্রহ। চলেছি সম্প্রতি
রাজকার্যে; সুদর্শনে, দেহো অনুমতি।
বজ্রসেন তুলি শির সহসা কহিলা,
‘একি লীল। হে সুন্দরী, একি তব লীলা!
পথ হতে ঘরে আনি কিসের কৌতুকে
নির্দোষ এ প্রবাসীর অবমানদুখে