পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৫৪
কথা

বিশ্ব-মাঝে আপনারে রাখি সর্বনীচে
সবার প্রসন্ন দৃষ্টি অভাগি মাগিছে
আপন সন্তান লাগি। সূর্যচন্দ্র হতে
পশু পক্ষী পতঙ্গ অবধি কোনোমতে
কেহ পাছে কোনো অপরাধ লয় মনে,
পাছে কেহ করে ক্ষোভ, অজানা কারণে
পাছে কারো লাগে ব্যথা, সকলের কাছে
আকুল বেদনাভরে দীন হয়ে আছে ৷

যখন বছর দেড় বয়স শিশুর
যকৃতের ঘটিল বিকার; জরাতুর
দেহখানি শীর্ণ হয়ে আসে। দেবালয়ে
মানিল মানত মাতা; পদামৃত লয়ে
করাইল পান; হরিসংকীর্তন-গানে
কাঁপিল প্রাঙ্গণ। ব্যাধি শান্তি নাহি মানে।
কাঁদিয়া শুধালে। নারী, ‘ব্রাহ্মণঠাকুর,
এত দুঃখে তবু পাপ নাহি হল দূর?
দিনরাত্রি দেবতার মেনেছি দোহাই,
দিয়েছি এত যে পূজা তবু রক্ষা নাই?
তবু কি নেবেন তাঁরা আমার বাছারে?
এত ক্ষুধা দেবতার? এত ভারে ভারে
নৈবেদ্য দিলাম খেতে বেচিয়া গহনা,
সর্বস্ব খাওয়ানু তবু ক্ষুধা মিটিল না?’
ব্রাহ্মণ কহিল, ‘বাছা, এ যে ঘোর কলি।
অনেক করেছ বটে, তবু এও বলি—
আজকাল তেমন কি ভক্তি আছে কারো?
সত্যযুগে যা পারিত তা কি আজ পার?