পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৫৯

গুরুদাসপুর গড়ে
বন্দা যখন বন্দী হইল তুরানি সেনার করে,
সিংহের মতো শৃঙ্খলগত বাঁধি লয়ে গেল ধরে
দিল্লিনগর-’পরে।
বন্দা সমরে বন্দী হইল গুরুদাসপুর গড়ে।

সম্মুখে চলে মোগল সৈন্য উড়ায়ে পথের ধূলি।
ছিন্ন শিখের মুণ্ড লইয়া বর্শাফলকে তুলি ৷
শিখ সাত শত চলে পশ্চাতে, বাজে শৃঙ্খলগুলি।
রাজপথ-’পরে লোক নাহি ধরে, বাতায়ন যায় খুলি।
শিখ গরজয় ‘গুরুজীর জয়’ পরানের ভয় ভুলি।
মোগলে ও শিখে উড়ালো আজিকে দিল্লিপথের ধুলি।

পড়ি গেল কাড়াকাড়ি—
আগে কেব। প্রাণ করিবেক দান, তারি লাগি তাড়াতাড়ি।
দিন গেলে প্রাতে ঘাতকের হাতে বন্দীরা সারি সারি
‘জয় গুরুজীর’ কহি শত বীর শত শির দেয় ডারি।

সপ্তাহকালে সাত শত প্রাণ নিঃশেষ হয়ে গেলে
বন্দার কোলে কাজি দিল তুলি বন্দার এক ছেলে;
কহিল, ‘ইহারে বধিতে হইবে নিজ হাতে অবহেলে।’
দিল তার কোলে ফেলে—
কিশোর কুমার, বাঁধা বাহু তার, বন্দার এক ছেলে।

কিছু না কহিল বাণী,
বন্দা সুধীরে ছোটো ছেলেটিরে লইল বক্ষে টানি।
ক্ষণকালতরে মাথার উপরে রাখে দক্ষিণপাণি,
শুধু একবার চুম্বিল তার রাঙা উষ্ণীষখানি।
তার পরে ধীরে কটিবাস হতে ছুরিকা খসায়ে আনি