পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কথা
৩৬৩

চোখে কেন লাগছে নাকো নেশা,
মনে মনে ভাবছে কেসর খাঁ।

পাঠান কহে, রাজপুতানির দেহে
কোথাও কিছু নাই কি কোমলতা?
বাহুযুগল নয় মৃণালের মতো,
কণ্ঠস্বরে বজ্র লজ্জাহত,
বড়ো কঠিন শুষ্ক স্বাধীন যত
মঞ্জরিহীন মরুভূমির লতা।
পাঠান ভাবে, দেহে কিম্বা মনে
রাজপুতানির নাইকো কোমলতা।

তান ধরিয়া ইমন ভূপালিতে
বাঁশি বেজে উঠল দ্রুত তালে।
কুণ্ডলেতে দোলে মুক্তামালা,
কঠিন হাতে মোটা সোনার বালা,
দাসীর হাতে দিয়ে ফাগের থালা
রানী বনে এলেন হেনকালে।
তান ধরিয়া ইমন ভূপালিতে
বাঁশি তখন বাজছে দ্রুত তালে।

কেসর কহে, ‘তোমারি পথ চেয়ে
দুটি চক্ষু করেছি প্রায় কানা।’
রানী কহে, ‘আমারো সেই দশা।’
এক শো সখী হাসিয়া বিবশা—
পাঠানপতির ললাটে সহসা
মারেন রানী কাঁসার থালাখানা।
রক্তধারা গড়িয়ে প’ড়ে বেগে
পাঠানপতির চক্ষু হল কানা।