পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাহিনী
৩৬৭

কর্মহীন গর্বহীন দীপ্তিহীন সুখে।
সুখে ছিনু, পাণ্ডবের গাণ্ডীবটংকারে
শঙ্কাকুল শত্রুদল আসিত না দ্বারে;
সুখে ছিনু, পাণ্ডবেরা জয়দৃপ্ত করে
ধরিত্রী দোহন করি ভ্রাতৃপ্রীতিভরে
দিত অংশ তার— নিত্যনব ভোগসুখে
আছিনু নিশ্চিন্তচিত্তে অনন্ত কৌতুকে।
সুখে ছিনু, পাণ্ডবের জয়ধ্বনি যবে
হানিত কৌরবকর্ণ প্রতিধ্বনিরবে;
পাণ্ডবের যশোবিম্ব-প্রতিবিম্ব আসি
উজ্জ্বল অঙ্গুলি দিয়া দিত পরকাশি
মলিন কৌরবকক্ষ। সুখে ছিনু পিতঃ,
আপনার সর্বতেজ করি নির্বাপিত
পাণ্ডবগৌরবতলে স্নিগ্ধশান্তরূপে,
হেমন্তের ভেক যথা জড়ত্বের কূপে।
আজি পাণ্ডুপুত্রগণে পরাভব বহি
বনে যায় চলি— আজ আমি সুখী নহি,
আজ আমি জয়ী।
ধৃতরাষ্ট্র। ধিক্ তোর ভ্রাতৃদ্রোহ। 
পাণ্ডবের কৌরবের এক পিতামহ,
সে কি ভুলে গেলি?
সুর্যোধন। ভুলিতে পারি নে সে যে— 
এক পিতামহ, তবু ধনে মানে তেজে
এক নহি। যদি হ’ত দূরবর্তী পর,
নাহি ছিল ক্ষোভ। শর্বরীর শশধর
মধ্যাহ্নের তপনেরে দ্বেষ নাহি করে—
কিন্তু প্রাতে এক পূর্ব-উদয়শিখরে
দুই ভ্রাতৃ-সূর্যলোক কিছুতে না ধরে।