পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রভাতসংগীত
৩৫

মহাছন্দে বন্দী হল যুগ যুগ যুগ-যুগান্তর— 
অসীম জগৎ-চরাচর
অবশেষে শ্রান্তকলেবর,
নিদ্রা আসে নয়নে তাহার,
আকর্ষণ হতেছে শিথিল,
উত্তাপ হতেছে একাকার।
জগতের প্রাণ হতে
উঠিল আকুল আর্তস্বর—
‘জাগো জাগো জাগো মহাদেব,
অলঙ্ঘ্য নিয়মপথে ভ্রমি
হয়েছে বিশ্রান্ত কলেবর,
আমারে নূতন দেহ দাও।
গাও দেব, মরণসংগীত,
পাব মোরা নূতন জীবন।’

জাগিয়া উঠিল মহেশ্বর,
তিন-কাল-ত্রিনয়ন মেলি
হেরিলেন দিক্-দিগন্তর।
প্রলয়পিনাক তুলি  করে ধরিলেন শূলী 
পদতলে জগৎ চাপিয়া,
জগতের আদি-অন্ত থরথর থরথর 
উঠিল কাঁপিয়া।
ছিঁড়িয়া পড়িয়া গেল জগতের সমস্ত বাঁধন। 
উঠিল অসীম শূন্যে গরজিয়া তরঙ্গিয়া 
ছন্দোমুক্ত জগতের উন্মত্ত আনন্দকোলাহল। 
মহা-অগ্নি উঠিল জ্বলিয়া—
জগতের মহাচিতানল।