পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাহিনী
৩৯৭

অর্জুনজননী সে যে। যবে কৃপ আসি
তোমারে পিতার নাম শুধালেন হাসি,
কহিলেন ‘রাজকুলে জন্ম নহে যার
অর্জুনের সাথে যুদ্ধে নাহি অধিকার’—
আরক্ত আনত মুখে না রহিল বাণী,
দাঁড়ায়ে রহিলে, সেই লজ্জা-আভাখানি
দহিল যাহার বক্ষ অগ্নিসম তেজে
কে সে অভাগিনী? অর্জুনজননী সে যে।
পুত্র দুর্যোধন ধন্য, তখনি তোমারে
অঙ্গরাজ্যে কৈল অভিষেক। ধন্য তারে।
মোর দুই নেত্র হতে অশ্রুবারিরাশি
উদ্দেশে তোমারি শিরে উচ্ছ্বসিল আসি
অভিষেক-সাথে। হেনকালে করি পথ
রঙ্গ-মাঝে পশিলেন সূত অধিরথ
আনন্দবিহ্বল। তখনি সে রাজসাজে
চারি দিকে কুতূহলী জনতার মাঝে
অভিষেকসিক্ত শির লুটায়ে চরণে
সূতবৃদ্ধে প্রণমিলে পিতৃসম্ভাষণে।
ক্রূর হাস্যে পাণ্ডবের বন্ধুগণ সবে
ধিক্কারিল। সেইক্ষণে পরম গরবে
বীর বলি যে তোমারে ওগো বীরমণি,
আশিসিল, আমি সেই অর্জুনজননী।
কর্ণ। প্রণমি তোমারে আর্যে। রাজমাতা তুমি, 
কেন হেথা একাকিনী? এ যে রণভূমি,
আমি কুরুসেনাপতি।
কুন্তী। পুত্র, ভিক্ষা আছে— 
বিফল না ফিরি যেন।
কর্ণ। ভিক্ষা, মোর কাছে!