পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০০
কাহিনী

কুন্তী। তবে চলে আয় বৎস, তবে চলে আয়। 
কর্ণ। যাব মাতঃ, চলে যাব, কিছু শুধাব না— 
না করি সংশয় কিছু, না করি ভাবনা।
দেবী, তুমি মোর মাতা। তোমার আহ্বানে
অন্তরাত্মা জাগিয়াছে। নাহি বাজে কানে
যুদ্ধভেরি জয়শঙ্খ। মিথ্যা মনে হয়
রণহিংসা, বীরখ্যাতি, জয়পরাজয়।
কোথা যাব, লয়ে চলো।
কুন্তী। ওই পরপারে 
যেথা জ্বলিতেছে দীপ স্তব্ধ স্কন্ধাবারে
পাণ্ডুর বালুকাতটে।
কর্ণ। হোথা মাতৃহারা 
মা পাইবে চিরদিন! হোথা ধ্রুবতারা
চিররাত্রি রবে জাগি সুন্দর উদার
তোমার নয়নে! দেবী, কহো আরবার,
আমি পুত্র তব।
কুন্তী। পুত্র মোর! 
কর্ণ। কেন তবে 
আমারে ফেলিয়া দিলে দূরে অগৌরবে
কুলশীলমানহীন মাতৃনেত্রহীন
অন্ধ এ অজ্ঞাত বিশ্বে? কেন চিরদিন
ভাসাইয়া দিলে মোরে অবজ্ঞার স্রোতে—
কেন দিলে নির্বাসন ভ্রাতৃকুল হতে?
রাখিলে বিচ্ছিন্ন করি অর্জুনে আমারে,
তাই শিশুকাল হতে টানিছে দোঁহারে
নিগূঢ় অদৃশ্য পাশ হিংসার আকারে
দুর্নিবার আকর্ষণে। মাতঃ, নিরুত্তর?
লজ্জা তব ভেদ করি অন্ধকার স্তর