পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১০
ক্ষণিকা

কোনো নামটি মন্দালিকা, কোনো নামটি চিত্রলিখা,
মঞ্জুলিকা মঞ্জরিণী ঝংকারিত কত।
আসত তারা কুঞ্জবনে চৈত্রজ্যোৎস্নারাতে,
অশোক-শাখা উঠত ফুটে প্রিয়ার পদাঘাতে।

কুরুবকের পরত চূড়া কালো কেশের মাঝে,
লীলাকমল রইত হাতে কী জানি কোন্ কাজে।
অলক সাজত কুন্দফুলে, শিরীষ পরত কর্ণমূলে,
মেখলাতে দুলিয়ে দিত নবনীপের মালা।
ধারাযন্ত্রে স্নানের শেষে ধূপের ধোঁওয়া দিত কেশে,
লোধ্রফুলের শুভ্র রেণু মাখত মুখে বালা।
কালাগুরুর গুরু গন্ধ লেগে থাকত সাজে,
কুরুবকের পরত মালা কালো কেশের মাঝে।

কুঙ্কুমেরই পত্রলেখায় বক্ষ রইত ঢাকা,
আঁচলখানির প্রান্তটিতে হংসমিথুন আঁকা।
বিরহেতে আষাঢ় মাসে চেয়ে রইত বঁধুর আশে,
একটি করে পূজার পুষ্পে দিন গণিত বসে।
বক্ষে তুলি বীণাখানি গান গাহিতে ভুলত বাণী,
রুক্ষ অলক অশ্রুচোখে পড়ত খসে খসে
মিলন রাতে বাজত পায়ে নূপুরদুটি বাঁকা,
কুঙ্কুমেরই পত্রলেখায় বক্ষ রইত ঢাকা।

প্রিয় নামটি শিখিয়ে দিত সাধের শারিকারে,
নাচিয়ে দিত ময়ূরটিরে কঙ্কণঝংকারে।
কপোতটিরে লয়ে বুকে সোহাগ করত মুখে মুখে,
সারসীরে খাইয়ে দিত পদ্মকোরক বহি।
অলক নেড়ে দুলিয়ে বেণী কথা কইত শৌরসেনী,
বলত সখীর গলা ধ’রে ‘হলা পিয় সহি’।