পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্ষণিকা
৪১১

জল সেচিত আলবালে তরুণ সহকারে,
প্রিয় নামটি শিখিয়ে দিত সাধের শারিকারে।

নবরত্নের সভার মাঝে রইতাম একটি টেরে,
দূর হইতে গড় করিতাম দিঙ্‌নাগাচার্যেরে।
আশা করি নামটা হত ওরই মধ্যে ভদ্রমত,
বিশ্বসেন কি দেবদত্ত কিম্বা বসুভূতি।
স্রগ্ধরা কি মালিনীতে বিম্বাধরের স্তুতিগীতে
দিতাম রচি দুটি-চারটি ছোটোখাটো পুঁথি।
ঘরে যেতাম তাড়াতাড়ি শ্লোক-রচনা সেরে,
নবরত্নের সভার মাঝে রইতাম একটি টেরে।

আমি যদি জন্ম নিতেম কালিদাসের কালে
বন্দী হতেম না জানি কোন্ মালবিকার জালে।
কোন্ বসন্তমহোৎসবে বেণুবীণার কলরবে
মঞ্জরিত কুঞ্জবনের গোপন অন্তরালে
কোন্ ফাগুনের শুক্লনিশায় যৌবনেরই নবীন নেশায়
চকিতে কার দেখা পেতেম রাজার চিত্রশালে।
ছল ক’রে তার বাধত আঁচল সহকারের ডালে,
আমি যদি জন্ম নিতেম কালিদাসের কালে।

হায় রে, কবে কেটে গেছে কালিদাসের কাল!
পণ্ডিতেরা বিবাদ করে লয়ে তারিখ সাল।
হারিয়ে গেছে সে-সব অব্দ, ইতিবৃত্ত আছে স্তব্ধ—
গেছে যদি আপদ গেছে, মিথ্যা কোলাহল।
হায় রে, গেল সঙ্গে তারি সেদিনের সেই পৌরনারী
নিপুণিকা চতুরিকা মালবিকার দল।
কো-ন্ স্বর্গে নিয়ে গেল বরমাল্যের থাল!
হায় রে কবে কেটে গেছে কালিদাসের কাল।