পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্ষণিকা
৪৩৩

আজি আসিয়াছ ভুবন ভরিয়া, গগনে ছড়ায়ে এলো চুল,
চরণে জড়ায়ে বনফুল।
ঢেকেছে আমারে তোমার ছায়ায়
সঘন সজল বিশাল মায়ায়,
আকুল করেছ শ্যাম সমারোহে হৃদয়সাগর-উপকূল—
চরণে জড়ায়ে বনফুল।

ফাল্গুনে আমি ফুলবনে বসে গেঁথেছি যত ফুলহার
সে নহে তোমার উপহার।
যেথা চলিয়াছ সেথা পিছে পিছে
স্তবগান তব আপনি ধ্বনিছে,
বাজাতে শেখে নি সে গানের সুর এ ছোটো বীণার ক্ষীণ তার—
এ নহে তোমার উপহার।

কে জানিত সেই ক্ষণিকা মুরতি দূরে করি দিবে বরষন,
মিলাবে চপল দরশন।
কে জানিত মোরে এত দিবে লাজ,
তোমার যোগ্য করি নাই সাজ,
বাসরঘরের দুয়ারে করালে পূজার অর্ঘ্য বিরচন—
একি রূপে দিলে দরশন।

ক্ষমা করো তবে ক্ষমা করো মোর আয়োজনহীন পরমাদ,
ক্ষমা করো যত অপরাধ।
এই ক্ষণিকের পাতার কুটিরে
প্রদীপ-আলোকে এসেও ধীরে ধীরে,
এই বেতসের বাঁশিতে পড়ুক তব নয়নের পরসাদ—
ক্ষমা করো যত অপরাধ।

আস নাই তুমি নবফাল্গুনে ছিনু যবে তব ভরসায়,
এসো এসো ভরা বরষায়।