পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশু
৪৫৯

নাম যদি তার জিগেস কর সেই আছে এক ভাবনা,
কোন্ নামে যে দিই পরিচয় সে তো ভেবেই পাব না।
নামের খবর কে রাখে ওর, ডাকি ওরে যা খুশি—
দুষ্টু বলো, দস্যি বলো, পোড়ারমুখি রাক্ষ‍ুসি।
বাপ-মায়ে যে নাম দিয়েছে বাপ-মায়েরই থাক্ সে নয়—
ছিষ্টি খুঁজে মিষ্টি নামটি তুলে রাখুন বাক্‌সে নয়।৷

একজনেতে নাম রাখবে কখন অন্নপ্রাশনে,
বিশ্বশুদ্ধ সে নাম নেবে, ভারী বিষম শাসন এ।
নিজের মনের মতো সবাই করুন কেন নামকরণ—
বাবা ডাকুন চন্দ্রকুমার, খুড়ো ডাকুন্ রামচরণ।
ঘরের মেয়ে তার কি সাজে সঙস্কৃত নামটা ওই—
এতে কারো দাম বাড়ে না অভিধানের দামটা বই!
আমি বাপু, ডেকেই বসি যেটাই মুখে আসুক-না—
যারে ডাকি সেই তা বোঝে, আর সকলে হাসুক-না।
একটি ছোটো মানুষ তাহার এক শো রকম রঙ্গ তো,
এমন লোককে একটি নামেই ডাকা কি হয় সংগত?৷


উপহার

স্নেহ-উপহার এনে দিতে চাই, কী-যে দেব তাই ভাবনা।
যত দিতে সাধ করি মনে মনে খুঁজে-পেতে সে তো পাব না।
আমার যা ছিল ফাঁকি দিয়ে নিতে সবাই করেছে একতা,
বাকি যে এখন আছে কত ধন না তোলাই ভালো সে কথা।
সোনা রুপো আর হীরে জহরত পোঁতা ছিল সবই মাটিতে,
জহরি যে যত সন্ধান পেয়ে নে গেছে যে যার বাটিতে।
টাকাকড়ি মেলা আছে টাঁকশালে, নিতে গেলে পড়ি বিপদে
বসনভূষণ আছে সিন্দুকে, পাহারাও আছে ফি পদে।৷