পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
কড়ি ও কোমল

ফোটা নব ফুলচয়, ওঠা নব কিশলয়,
নবীন বসন্ত আয় নিয়ে।
যে যায় সে চলে যাক, সব তার নিয়ে যাক,
নাম তার যাক মুছে দিয়ে।

বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

দিনের আলো নিবে এল, সুয্যি ডোবে ডোবে।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে, রঙের উপর রঙ।
মন্দিরেতে কাঁসর ঘণ্টা বাজল ঠঙ্ ঠঙ্‌।
ও পারেতে বিষ্টি এল, ঝাপসা গাছপালা।
এ পারেতে মেঘের মাথায় এক-শো মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান—
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান।

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা—
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়, কেউ করে না মানা।
কত নতুন ফুলের বনে বিষ্টি দিয়ে যায়,
পলে পলে নতুন খেলা কোথায় ভেবে পায়!
মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে,
কত দিনের লুকোচুরি কত ঘরের কোণে!
তারি সঙ্গে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান—
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদেয় এল বান।

মনে পড়ে ঘরটি আলো, মায়ের হাসিমুখ—
মনে পড়ে মেঘের ডাকে গুরুগুরু বুক।
বিছানাটির একটি পাশে ঘুমিয়ে আছে খোকা,
মায়ের ’পরে দৌরাত্মি সে না যায় লেখাজোকা।