পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
খেয়া
৪৯৫

একলা ছিলাম কুয়ার ধারে নিমের ছায়াতলে,
কলস নিয়ে সবাই তখন পাড়ায় গেছে চলে।
আমায় তারা ডেকে গেল, ‘আয় গো বেলা যায়।’
কোন্ আলসে রইনু বসে কিসের ভাবনায়।

পদধ্বনি শুনি নাইকো কখন তুমি এলে।
কইলে কথা ক্লান্তকণ্ঠে— করুণ চক্ষু মেলে—
‘তৃষাকাতর পান্থ আমি’। শুনে চমকে উঠে
জলের ধারা দিলেম ঢেলে তোমার করপুটে।
মর্মরিয়া কাঁপে পাতা, কোকিল কোথা ডাকে—
বাবলা ফুলের গন্ধ ওঠে পল্লীপথের বাঁকে।

যখন তুমি শুধালে নাম পেলেম বড়ো লাজ,
তোমার মনে থাকার মতো করেছি কোন্ কাজ!
তোমায় দিতে পেরেছিলেম একটু তৃষার জল,
এই কথাটি আমার মনে রহিল সম্বল।
কুয়ার ধারে দুপুরবেলা তেমনি ডাকে পাখি,
তেমনি কাঁপে নিমের পাতা— আমি বসেই থাকি।

 ৯ চৈত্র ১৩১২


দিনশেষ

ভাঙা অতিথশালা।

ফাটা ভিতে অশথ বটে মেলেছে ডালপালা।
প্রখর রোদে তপ্ত পথে কেটেছে দিন কোনোমতে—
মনে ছিল, সন্ধ্যাবেলায় মিলবে হেথা ঠাঁই।
মাঠের ’পরে আঁধার নামে, হাটের লোকে ফিরল গ্রামে,
হেথায় এসে চেয়ে দেখি— নাই যে কেহ নাই।