পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩২
বলাকা

বাহির-পানে তাকায় না যে কেউ,
দেখে না যে বান ডেকেছে—
জোয়ার-জলে উঠছে প্রবল ঢেউ।
চলতে ওরা চায় না মাটির ছেলে
মাটির ’পরে চরণ ফেলে ফেলে,
আছে অচল আসনখান। মেলে
যে যার আপন উচ্চ বাঁশের মাচায়।
আয় অশাস্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

তোরে হেথায় করবে সবাই মানা।
হঠাৎ আলো দেখবে যখন
ভাববে, একি বিষম কাণ্ডখানা!
সংঘাতে তোর উঠবে ওরা রেগে,
শয়ন ছেড়ে আসবে ছুটে বেগে,
সেই সুযোগে ঘুমের থেকে জেগে
লাগবে লড়াই মিথ্যা এবং সাঁচায়।
আয় প্রচণ্ড, আয় রে আমার কাঁচা।

শিকল-দেবীর ওই-যে পূজাবেদি
চিরকাল কি রইবে খাড়া?
পাগলামি, তুই আয় রে দুয়ার ভেদি।
ঝড়ের মাতন বিজয়-কেতন নেড়ে
অট্টহাস্যে আকাশখানা ফেড়ে
ভোলানাথের ঝোলাঝুলি ঝেড়ে
ভুলগুলো সব আন্ রে বাছা-বাছা।
আয় প্রমত্ত, আয় রে আমার কাঁচা।

আন্ রে টেনে বাঁধা পথের শেষে।
বিবাগি কর্ অবাধ-পানে,
পথ কেটে যাই অজানাদের দেশে।