পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৫৬
পলাতকা

চায় সে আমার কাছে
আমার মাঝে গভীর গোপন যে সুধারস আছে।
গ্রহতারার সভার মাঝারে সে
ওই-যে আমার মুখে চেয়ে দাঁড়িয়ে হোথায় রইল নির্নিমেষে
মধুর ভুবন, মধুর আমি নারী,
মধুর মরণ, ওগো আমার অনন্ত ভিখারি।
দাও খুলে দাও দ্বার—
ব্যর্থ বাইশ বছর হতে পার করে দাও কালের পারাবার।


ফাঁকি

বিনুর বয়স তেইশ তখন, রোগে ধরল তারে।
ওষুধে ডাক্তারে
ব্যাধির চেয়ে আধি হল বড়ো;
নানা ছাপের জমল শিশি, নানা মাপের কৌটো হল জড়ো
বছর-দেড়েক চিকিৎসাতে করলে যখন অস্থি জরজর
তখন বললে, ‘হাওয়া বদল করো।’
এই সুযোগে বিনু এবার চাপল প্রথম রেলের গাড়ি,
বিয়ের পরে ছাড়ল প্রথম শ্বশুরবাড়ি।

নিবিড় ঘন পরিবারের আড়ালে-আবডালে
মোদের হত দেখাশুনো ভাঙা লয়ের তালে;
মিলন ছিল ছাড়া-ছাড়া,
চাপা-হাসি টুকরো-কথার নানান্ জোড়াতাড়া।
আজকে হঠাৎ ধরিত্রী তার আকাশ-ভরা সকল আলো ধ’রে
বর-বধূরে নিলে বরণ করে।
রোগা মুখের মস্ত বড়ো দুটি চোখে
বিনুর যেন নতুন করে শুভদৃষ্টি হল নতুন লোকে।