পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬৪
পলাতকা

দুঃখে সুখে দিন হয়ে যায় গত
স্রোতের জলে ঝরে-পড়া ভেসে যাওয়া ফুলের মতো।
অবশেষে হল
মঞ্জুলিকার বয়স ভরা ষোলো।
কখন শিশুকালে
হৃদয়-লতার পাতার অন্তরালে
বেরিয়েছিল একটি কুঁড়ি
প্রাণের গোপন রহস্যতল ফুঁড়ি—
জানত না তো আপ্‌নাকে সে,
শুধায় নি তার নাম কোনোদিন বাহির হতে খেপা বাতাস এসে,
সেই কুঁড়ি আজ অন্তরে তার উঠছে ফুটে
মধুর রসে ভ’রে উঠে।
সে যে প্রেমের ফুল
আপন রাঙা পাপড়িভারে আপনি সমাকুল।
আপনাকে তার চিনতে যে আর নাইকো বাকি—
তাই তো থাকি থাকি
চমকে ওঠে নিজের পানে চেয়ে।
আকাশ-পারের বাণী তারে ডাক দিয়ে যায় আলোর ঝর্না বেয়ে;
রাতের অন্ধকারে
কোন্ অসীমের রোদন-ভরা বেদন লাগে তারে!
বাহির হতে তার
ঘুচে গেছে সকল অলংকার;
অন্তর তার রাঙিয়ে ওঠে স্তরে স্তরে—
তাই দেখে সে আপ্‌নি ভেবে মরে।
কখন কাজের ফাঁকে
জানলা ধ’রে চুপ ক’রে সে বাইরে চেয়ে থাকে—
যেখানে ওই সজ্‌নেগাছের ফুলের ঝুরি বেড়ার গায়ে
রাশি রাশি হাসির ঘায়ে
আকাশটারে পাগল করে দিবস-রাতি।