পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাতকা
৫৬৯

ভয়ে মরে বিরহিণী
শুনতে যেন পাবে কেহ রক্তে যে তার বাজে রিনি রিনি।
পদ্মপাতায় শিশির যেন, মনখানি তার বুকে
দিবারাত্রি টলছে কেন এমনতরো ধরা পড়ার মুখে।

ব্যামো সেরে আসছে ক্রমে,
গাঁঠের ব্যথা অনেক এল কমে।
রোগী শয্যা ছেড়ে
একটু এখন চলে হাত-পা নেড়ে।
এমন সময় সন্ধ্যাবেলা
হাওয়ায় যখন যূথীবনের পরানখানি মেলা,
আঁধার যখন চাঁদের সঙ্গে কথা বলতে যেয়ে
চুপ করে শেষ তাকিয়ে থাকে চেয়ে,
তখন পুলিন রোগীসেবার পরামর্শ-ছলে
মঞ্জুলিরে পাশের ঘরে ডেকে বলে,
‘জান তুমি, তোমার মায়ের সাধ ছিল এই চিতে
মোদের দোঁহার বিয়ে দিতে।
সে ইচ্ছাটি তাঁরি
পুরাতে চাই যেমন ক’রেই পারি।
এমন করে আর কেন দিন কাটাই মিছিমিছি?’

‘না না, ছিছি, ছিছি!’
এই ব’লে সে মঞ্জুলিকা দু হাত দিয়ে মুখখানি তার ঢেকে
ছুটে গেল ঘরের থেকে।
আপন ঘরে দুয়ার দিয়ে পড়ল মেঝের ’পরে
ঝর্‌ঝরিয়ে ঝর্‌ঝরিয়ে বুক ফেটে তার অশ্রু ঝ’রে পড়ে।
ভাবলে, ‘পোড়া মনের কথা এড়ায় নি ওঁর চোখ।
আর কেন গো, এবার মরণ হোক।’