পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পলাতকা
৫৭১

ব্যস্ত সবাই, কেমনতরো ভাব,
আসছে ঘরে নানারকম বিলিতি আসবাব।
দেখলে বাপের নতুন ক’রে সাজসজ্জা শুরু—
হঠাৎ কালো ভ্রমরকৃষ্ণ ভুরু,
পাকা চুল সব কখন হল কটা,
চাদরেতে যখন-তখন গন্ধ মাখার ঘটা।

মার কথা আজ মঞ্জুলিকার পড়ল মনে
বুক-ভাঙা এক বিষম ব্যথার সনে।
হোক-না মৃত্যু, তবু
এ বাড়ির এই হাওয়ার সঙ্গে বিরহ তাঁর ঘটে নাই তো কভু।
কল্যাণী সেই মূর্তিখানি সুধামাখা,
এ সংসারের মর্মে ছিল আঁকা;
সাধ্বীর সেই সাধন-পুণ্য ছিল ঘরের মাঝে,
তাঁরি পরশ ছিল সকল কাজে।
এ সংসারে তাঁর হবে আজ পরম মৃত্যু, বিষম অপমান—
সেই ভেবে যে মঞ্জুলিকার ভেঙে পড়ল প্রাণ।

ছেড়ে লজ্জাভয়
কন্যা তখন নিঃসংকোচে কয়
বাপের কাছে গিয়ে,
‘তুমি নাকি করতে যাবে বিয়ে!
আমরা তোমার ছেলেমেয়ে নাৎনি-নাতি যত
সবার মাথা করবে নত?
মায়ের কথা ভুলবে তবে?
তোমার প্রাণ কি এত কঠিন হবে!’
বাবা বললে শুষ্ক হাসে,
‘কঠিন আমি কেই বা জানে না সে!