পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিশু ভোলানাথ
৫৭৫

শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে
তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে।
কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে—
পুজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে।

মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে,
জানলা থেকে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে—
মনে হয় মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে।
কোলের ’পরে ধ’রে কবে দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।

 ৯ আশ্বিন ১৩২৮


খেলাভোলা

তুই কি ভাবিস দিন রাত্তির খেলতে আমার মন?
কক্‌খনো তা সত্যি না মা, আমার কথা শোন্।
সেদিন ভোরে দেখি উঠে বৃষ্টিবাদল গেছে ছুটে,
রোদ উঠেছে ঝিল্‌মিলিয়ে বাঁশের ডালে ডালে।
ছুটির দিনে কেমন সুরে পুজোর সানাই বাজছে দূরে,
তিনটে শালিখ ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালে।
খেলনাগুলো সামনে মেলি কী-যে খেলি, কী-যে খেলি,
সেই কথাটাই সমস্তখন ভাবনু আপন-মনে।
লাগল না ঠিক কোনো খেলাই, কেটে গেল সারা বেলাই—
রেলিং ধ’রে রইনু বসে বারান্দাটার কোণে।

খেলা-ভোলার দিন মা, আমার আসে মাঝে মাঝে—
সেদিন আমার মনের ভিতর কেমনতরো বাজে।
শীতের বেলায় দুই পহরে দূরে কাদের ছাদের ’পরে
ছোট্ট মেয়ে রোদ্‌দুরে দেয় বেগুনি রঙের শাড়ি।