পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৭৬
শিশু ভোলানাথ

চেয়ে চেয়ে চুপ করে রই, তেপান্তরের পার বুঝি ওই—
মনে ভাবি ওইখানেতেই আছে রাজার বাড়ি।
থাকত যদি মেঘে-ওড়া পক্ষিরাজের বাচ্ছা ঘোড়া,
তক্ষুনি যে যেতেম তারে লাগাম দিয়ে ক’ষে।
যেতে যেতে নদীর তীরে ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমিরে
পথ শুধিয়ে নিতেম আমি গাছের তলায় বসে।

এক-এক দিন যে দেখেছি, তুই বাবার চিঠি হাতে
চুপ করে কী ভাবিস বসে ঠেস দিয়ে জানলাতে ৷
মনে হয় তোর মুখে চেয়ে, তুই যেন কোন্ দেশের মেয়ে,
যেন আমার অনেক কালের অনেক দূরের মা।
কাছে গিয়ে হাতখানি ছুঁই, হারিয়ে ফেলা মা যেন তুই,
মাঠ-পারে কোন্ বটের তলার বাঁশির সুরের মা।
খেলার কথা যায় যে ভেসে, মনে ভাবি কোন্ কালে সে
কোন্ দেশে তোর বাড়ি ছিল কোন্ সাগরের কূলে!
ফিরে যেতে ইচ্ছে করে অজানা সেই দ্বীপের ঘরে
তোমায় আমায় ভোরবেলাতে নৌকোতে পাল তুলে।

 ১১ আশ্বিন ১৩৩৮


ইচ্ছামতী

যখন যেমন মনে করি তাই হতে পাই যদি,
আমি তবে এক্ষনি হই ইচ্ছামতী নদী।
রইবে আমার দখিন ধারে সূর্য ওঠার পার,
বাঁয়ের ধারে সন্ধেবেলায় নামবে অন্ধকার,
আমি কইব মনের কথা দুই পারেরই সাথে—
আধেক কথা দিনের বেলায়, আধেক কথা রাতে।

যখন ঘুরে ঘুরে বেড়াই আপন গাঁয়ের ঘাটে
ঠিক তখনি গান গেয়ে যাই দূরের মাঠে মাঠে।