পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০২
পূরবী

সেদিন ভোরে দেখেছিলাম প্রথম জেগে উঠে
নিরুদ্দেশের পাগল হাওয়ায় আগল গেছে টুটে—
কাজ-ভোলা সব খেপার দলে তেমনি আবার জুটে
করবে দিশেহারা?
স্বপনমৃগ ছুটিয়ে দিয়ে পিছনে তার ছুটে
তেমনি হব সারা।

বাঁধা পথের বাঁধন মেনে চলতি কাজের স্রোতে
চলতে দেবে নাকো?
সন্ধ্যাবেলায় জোনাক জ্বালা বনের আঁধার হতে
তাই কি আমায় ডাক’?
সকল চিন্তা উধাও ক’রে অকারণের টানে
অবুঝ ব্যথার চঞ্চলতা জাগিয়ে দিয়ে প্রাণে
থরথরিয়ে কাঁপিয়ে বাতাস ছুটির গানে গানে
দাঁড়িয়ে কোথায় থাক’?
না জেনে পথ পড়ব তোমার বুকেরই মাঝখানে
তাই আমারে ডাক’।

জানি জানি, তুমি আমার চাও না পূজার মালা
ওগো খেলার সাথি।
এই জনহীন অঙ্গনেতে গন্ধপ্রদীপ জ্বালা,
নয় আরতির বাতি।
তোমার খেলায় আমার খেলা মিলিয়ে দেব তবে
নিশীথিনীর স্তব্ধ সভায় তারার মহোৎসবে,
তোমার বীণার ধ্বনির সাথে আমার বাঁশির রবে
পূর্ণ হবে রাতি।
তোমার আলোয় আমার আলো মিলিয়ে খেলা হবে,
নয় আরতির বাতি।

হারুনা-মারু জাহাজ
৭ অক্টোবর ১৯২৪