পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পূরবী
৬০৩

কৃতজ্ঞ

বলেছিনু ‘ভুলিব না’ যবে তব ছলছল আঁখি
নীরবে চাহিল মুখে। ক্ষমা কোরো যদি ভুলে থাকি।
সে যে বহুদিন হল। সেদিনের চুম্বনের ’পরে
কত নববসন্তের মাধবীমঞ্জরি থরে থরে
শুকায়ে পড়িয়া গেছে, মধ্যাহ্নের কপোতকাকলি
তারি ’পরে ক্লান্ত ঘুম চাপা দিয়ে এল গেল চলি
কতদিন ফিরে ফিরে! তব কালো নয়নের দিঠি
মোর প্রাণে লিখেছিল প্রথম প্রেমের সেই চিঠি
লজ্জাভয়ে, তোমার সে হৃদয়ের স্বাক্ষরের ’পরে
চঞ্চল আলোক ছায়া কতকাল প্রহরে প্রহরে
বুলায়ে গিয়েছে তূলি, কত সন্ধ্যা দিয়ে গেছে এঁকে
তারি ’পরে সোনার বিস্মৃতি, কত রাত্রি গেছে রেখে
অস্পষ্ট রেখার জালে আপনার স্বপনলিখন
তাহারে আচ্ছন্ন করি! প্রতি মুহূর্তটি প্রতি ক্ষণ
বাঁকাচোরা নানা চিত্রে চিন্তাহীন বালকের প্রায়
আপনার স্মৃতিলিপি চিত্তপটে এঁকে এঁকে যায়,
লুপ্ত করি পরস্পরে বিস্মৃতির জাল দেয় বুনে।
সেদিনের ফাল্গুনের বাণী যদি আজি এ ফাল্গুনে
ভুলে থাকি, বেদনার দীপ হতে কখন নীরবে
অগ্নিশিখা নিবে গিয়ে থাকে যদি, ক্ষমা কোরো তবে।

তবু জানি, একদিন তুমি দেখা দিয়েছিলে ব’লে
গানের ফসল মোর এ জীবনে উঠেছিল ফ’লে,
আজো নাই শেষ। রবির আলোক হতে একদিন
ধ্বনিয়া তুলেছে তার মর্মবাণী, বাজায়েছে বীন
তোমার আঁখির আলো। তোমার পুরণ নাহি আর,
কিন্তু কী পরশমণি রেখে গেছ অন্তরে আমার,