পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বনবাণী
৬১৫

তোমার বাসাখানি আঁটিয়া মুঠি
চাহে না আঁকড়িতে কালের ঝুঁটি।
দেখি যে পথিকের মতোই তাকে,
থাকা ও না-থাকার সীমায় থাকে।
ফুলের মতো ও যে, পাতার মতো—
যখন যাবে, রেখে যাবে না ক্ষত।

নাইকো রেষারেষি পথে ও ঘরে,
তাহারা মেশামেশি সহজে করে।
কীর্তিজালে ঘেরা আমি তো ভাবি—
তোমার ঘরে ছিল আমারো দাবি;
হারায়ে ফেলেছি সে ঘূর্ণিবায়ে
অনেক কাজে আর অনেক দায়ে।

[ শান্তিনিকেতন ]
চৈত্র ১৩৩৩


নীলমণিলতা

ফাল্গুনমাধুরী তার চরণের মঞ্জীরে মঞ্জীরে
নীলমণিমঞ্জরির গুঞ্জন বাজায়ে দিল কি রে?
আকাশ যে মৌনভার বহিতে পারে না আর,
নীলিমাবন্যায় শূন্যে উচ্ছলে অনস্ত ব্যাকুলতা,
তারি ধার৷ পুষ্পপাত্রে ভরি নিল নীলমণিলতা।

পৃথ্বীর গভীর মৌন দূর শৈলে ফেলে নীল ছায়া,
মধ্যাহ্নমরীচিকায় দিগন্তে খোঁজে সে স্বপ্নকায়া—
যে মৌন নিজেরে চায় সমুদ্রের নীলিমায়
অস্তহীন সেই মৌন উচ্ছ্বসিল নীলগুচ্ছ ফুলে—
দুর্গম রহস্য তার উঠিল সহজ ছন্দে দুলে।