পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহুয়া
৬১৯

নিশীথনাচে ডমরু বাজে, অরুণদ্বার খোলে—
জাগে মুরতি, পুরানো জ্যোতি নব উষার কোলে।

জাগুক মন, কাঁপুক বন, উড়ুক ঝরা পাতা—
উঠুক জয়, তোমারি জয়, তোমারি জয়গাথা।
ঋতুর দল নাচিয়া চলে
ভরিয়া ডালি ফুলে ও ফলে,
নৃত্যলোল চরণতলে মুক্তি পায় ধরা—
ছন্দে মেতে যৌবনেতে রাঙিয়ে ওঠে জরা।

 ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৩৪

শেষমধু

বসন্তবায় সন্ন্যাসী হায় চৈৎ-ফসলের শূন্য খেতে
মৌমাছিদের ডাক দিয়ে যায় বিদায় নিয়ে যেতে যেতে—

আয় রে ওরে মৌমাছি, আয়, চৈত্র যে যায় পত্রঝরা,
গাছের তলায় আঁচল বিছায় ক্লান্তি-অলস বসুন্ধরা।
সজনে ঝুলায় ফুলের বেণী আমের মুকুল সব ঝরে নি,
কুঞ্জবনের প্রান্তধারে আকন্দ রয় আসন পেতে।
আয় রে তোরা মৌমাছি, আয়, আসবে কখন শুক্‌নো খরা,
প্রেতের নাচন নাচবে তখন রিক্ত নিশায় শীর্ণ জরা।

শুনি যেন কাননশাখায় বেলাশেষের বাজায় বেণু।
মাথিয়ে নে আজ পাখায় পাখায় স্মরণ-ভরা গন্ধরেণু।
কাল যে কুসুম পড়বে ঝরে তাদের কাছে নিস গো ভরে
ওই বছরের শেষের মধু এই বছরের মৌচাকেতে।
নূতন দিনের মৌমাছি, আয়, নাই রে দেরি, করিস ত্বরা—
শেষের দানে ওই রে সাজায় বিদায়দিনের দানের ভরা।