পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২০
মহুয়া

চৈত্রমাসের হাওয়ায়-কাঁপা দোলন-চাঁপার কুঁড়িখানি
প্রলয়-দাহের রৌদ্রতাপে বৈশাখে আজ ফুটবে জানি।
যা-কিছু তার আছে দেবার শেষ করে সব নিবি এবার—
যাবার বেলায় যাক চলে যাক বিলিয়ে দেবার নেশায় মেতে।
আয় রে ওরে মৌমাছি, আয়, আয় রে গোপন-মধু-হরা—
চরম দেওয়া সঁপিতে চায় ওই মরণের স্বয়ম্বরা।

[শান্তিনিকেতন]
১২ চৈত্র ১৩৩৩


সাগরিকা

সাগরজলে সিনান করি সজল এলো চুলে
বসিয়াছিলে উপল-উপকূলে।
শিথিল পীতবাস
মাটির ’পরে কুটিলরেখা লুটিল চারি পাশ।
নিরাবরণ বক্ষে তব, নিরাভরণ দেহে
চিকন সোনা-লিখন ঊষা আঁকিয়া দিল স্নেহে।
মকরচূড় মুকুটখানি পরি ললাট-’পরে
ধনুক বাণ ধরি দখিন করে
দাঁড়ানু রাজবেশী—
কহিনু, ‘আমি এসেছি পরদেশী।’

চমকি ত্রাসে দাঁড়ালে উঠি শিলা-আসন ফেলে;
শুধালে, ‘কেন এলে?’
কহিনু আমি, ‘রেখো না ভয় মনে,
পূজার ফুল তুলিতে চাহি তোমার ফুলবনে।’
চলিলে সাথে, হাসিলে অনুকূল;
তুলিনু যূথী, তুলিনু জাতী, তুলিনু চাঁপাফুল।
দুজনে মিলি সাজায়ে ডালি বসিনু একাসনে,
নটরাজেরে পুজিনু একমনে।