পাতা:সঞ্চয়িতা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ৰিচিত্রিতা
৬৫১

যাত্রা

রাজা করে রণযাত্রা; বাজে ভেরি, বাজে করতাল;
কম্পমান বসুন্ধরা। মন্ত্রী ফেলি ষড়যন্ত্রজাল
রাজ্যে রাজ্যে বাধায় জটিল গ্রন্থি। বাণিজ্যের স্রোত
ধরণী বেষ্টন করে জোয়ার-ভাঁটায়। পণ্যপোত
ধায় সিন্ধুপারে-পারে। বীরকীর্তিস্তম্ভ হয় গাঁথা
লক্ষ লক্ষ মানবকঙ্কালস্তূপে; ঊর্ধ্বে তুলি মাথা
চূড়া তার স্বর্গ-পানে হানে অট্টহাস। পণ্ডিতেরা
আক্রমণ করে বারম্বার পুঁথির প্রাচীর ঘেরা
দুর্ভেদ্য বিদ্যার দুর্গ; খ্যাতি তার ধায় দেশে দেশে।

হেথা গ্রামপ্রান্তে নদী বহি চলে প্রান্তরের শেষে
ক্লান্ত স্রোতে। তরীখানি তুলি লয়ে নববধূটিরে
চলে দুর পল্লি-পানে। সূর্য অস্ত যায়। তীরে তীরে
স্তব্ধ মাঠ। দুরু দুরু বালিকার হিয়া। অন্ধকারে
ধীরে ধীরে সন্ধ্যাতারা দেখা দেয় দিগন্তের ধারে।

 ১২ মাঘ [১৩৩৮]


দ্বিধা

বাহিরে যার বেশভূষার ছিল না প্রয়োজন,
হৃদয়তলে আছিল যার বাস,
পরের দ্বারে পাঠাতে তারে দ্বিধায় ভরে মন—
কিছুতে হায়, পায় না আশ্বাস।
সবুজ-বনে নীল-গগনে মিশায় রূপ সবার সনে,
পাখির গানে পরায় যারে সাজ,
ছিন্ন হয়ে সে ফুল একা আকাশহারা দিবে কি দেখা
পাথরে-গাঁথা প্রাচীর-মাঝে আজ?